শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

থমকে গেছে যুবলীগের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া

হতাশ চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের পদপ্রত্যাশীরা

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

প্রায় আট বছর পর নতুন কমিটি গঠনের আলোচনা শুরু হলেও সহসাই হচ্ছে না চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি। রমজান, নতুন করে করোনায় আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া, নানামুখী রাজনৈতিক কর্মসূচি, ইউনিয়ন পরিষদ ও কয়েকটি পৌরসভা নির্বাচনসহ নানা কারণে পিছিয়ে পড়েছে সম্মেলন। সেই সঙ্গে থেমে গেছে নগর যুবলীগের কমিটি গঠনের তৎপরতা। এসব ছাড়াও রয়েছে নগর যুবলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। যুবলীগের এই কমিটি না থাকায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশার পাশাপাশি কোণঠাসা হয়ে পড়ছে সাংগঠনিক কর্মকা-। অন্যদিকে চট্টগ্রামের রাজনীতি হচ্ছে দুই মেরুকরণে বিভক্ত। এই দুই মেরুকরণের মধ্যে যুবলীগের হাল ধরতে পারবেন এমন যোগ্য নেতাও রয়েছেন তৃণমূলে। ফলে কাকে রেখে, কাকে বাদ দেবেন সেই গুঞ্জনও রয়েছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। যোগ্য, ত্যাগী এবং গ্রহণযোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন চান সংশ্লিষ্টরা। তৃণমূল ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের কমিটি বা সম্মেলন করার আলোচনা থেমে নেই। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও সেই আলোচনা চলছে সভাপতি-সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ কারা পাচ্ছেন। নেতৃত্বে আসার আলোচনায় রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা, তারুণ্যদীপ্ত যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নানের ছেলে দিদারুল আলম দিদার, মাহবুবুল হক সুমন, সাবেক ছাত্রনেতা এম আর আজিম, দেবাশীষ পাল দেবু, হাসান মুরাদ বিপ্লব, আরশেদুল আলম বাচ্চু প্রমুখ। কারা আসতে পারেন, সেই বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাদের মধ্যেও।

কেন্দ্রীয় যুবলীগের দফতর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বলেন, যুবলীগের পক্ষ থেকে গত ১০ মার্চ চিঠি দেওয়া হয়েছে প্রতিটি জেলায়। এখানে কীভাবে ওয়ার্ড, থানা, উপজেলা ও জেলা কমিটি করবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যেহেতু আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। সেই কমিটির সম্মেলন করতে হবে। তবে কখন, কীভাবে সম্মেলন হবে এমন নির্দেশনা নেই। এই বিষয়ে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ নেতারা আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সংগঠক ফরিদ মাহমুদ বলেন, যুবলীগকে আরও শক্তিশালী করতে কমিটি গঠন করা জরুরি। এতে ত্যাগী, যোগ্য, নির্যাতিত এবং দলের আদর্শিক যোগ্য নেতৃত্বে যুবলীগের আগামীর সাংগঠনিক তৎপরতা আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে সেই প্রত্যাশা করছি।

আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা বলেন, একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও, তা বাস্তবায়ন হয়নি রাজনৈতিকসহ নানা কারণে। ফলে নগর যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হতাশার পাশাপাশি অস্থিত্ব সংকটেও পড়েছেন। তবে নতুন করে কমিটি গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একটা চিঠি পেয়েছি। সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা চলছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

নগর ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা ও সংগঠক আরশেদুল আলম বাচ্চু বলেন, যে কোনো দলের নেতৃত্বে আসতে হলে যোগ্য সংগঠক বা ত্যাগী, সাংগঠনিক এবং গ্রহণযোগ্য নেতা বেশি প্রয়োজন। যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে একসময় প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। সেই নেতৃত্বেই এক ও অভিন্ন হয়ে পাশে ছিলাম এবং এখনো রাজনীতির মাঠে আছি। তবে দলের নেতৃত্বে যোগ্য, ত্যাগী ও গ্রহণযোগ্য নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন হলে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে চাঙাভাব ফিরে আসবে যাবে বলে জানান তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি, সাংগঠনিক দুর্বলতা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনসহ নানা কারণে দীর্ঘ ৭ বছর কমিটি হয়নি। এটি শুধু আহ্বায়ক কমিটিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তিন মাসের জন্য গঠিত চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি এখন ৮ বছর অতিক্রম করছে। নগরীর ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মাত্র ৫টি কমিটি। সেই ৫টি ওয়ার্ডের কমিটি নিয়েও রয়েছে বির্তক। ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহ্বায়ক ও দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, মাহবুবুল হক ও দিদারুল আলমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। তারা পাঁচজনই প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। ৮ বছরে যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব যেমন গড়ে ওঠেনি, তেমনি আহ্বায়কদের অন্তঃকোন্দলে ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রমও।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর