বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

পি কের সহযোগী নাহিদাসহ তিনজন গ্রেফতার, পাঁচ দিনের রিমান্ড

বিশেষ প্রতিনিধি

বিদেশে পলাতক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালাদারের অর্থ পাচারের অন্যতম সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর ভিপি নাহিদা আক্তার রুনাইসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। গতকাল রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া অন্য দুজন হলেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর সাবেক ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান ও একই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী।

 মতিঝিল থেকে গ্রেফতার করে দুদকের কার্যালয়ে আনার পর আসামিদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত আসামিদের প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে।

দুদক সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দুদকের করা একটি মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। ওই মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশে পরস্পরের সহায়তায় প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয়ে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ভুয়া/অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠান আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের নামে জাল রেকর্ডপত্রাদি তৈরি করে তা সঠিক হিসাবে ব্যবহার করে উক্ত অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের মালিককে ভুয়া ঋণ পেতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এবং সংশ্লিষ্ট ঋণের গ্রহীতা আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের পরিচালকরা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মাধ্যমে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন এবং পরবর্তীতে, বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ওই টাকা বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপনপূর্বক পাচার করে দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), (৩) ধারায় অপরাধ করেছেন।

গ্রেফতার হওয়া নাহিদা রুনাই চট্টগ্রামের খুলশী থানার পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার জাকির হোসেন বাইলেন স্থায়ী ঠিকানার বাসিন্দা। তার বাবার নাম মফিজুর রহমান। রুনাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় এসে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিডেটে চাকরি পান। সেখানেই ২০০৯ সাল থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন পি কে হালদার। ২০১১-১২ সালে পি কে হালদারের সঙ্গে পরিচয় হয় রুনাইয়ের। এরপর ঘনিষ্ঠতা। পি কে হালদারের বান্ধবী বড় আপা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। পি কে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে নাহিদা রুনাইকে নিয়ে আসেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে। দ্রুত সময়ে তাকে চারটি পদোন্নতি দিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট করেন পি কে হালদার।

এ ছাড়া পি কে, নাহিদা রুনাই ও রাফসানসহ কয়েজন তাদের সহযোগীদের জাল এনআইডি দিয়ে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এবং এফএএস লিজিং থেকে প্রায় দুই ডজন ভুয়া কোম্পানির নামে ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেন। এ টাকার পুরোটাই বিদেশে পাচার করা হয়েছে। দুর্নীতি, জালিয়াতিসহ নানাবিধ অনিয়মের মাধ্যমে ভুয়া ঋণ হিসাবের অনুকূলে ঋণের নামে লেয়ারিং করেন তারা। এভাবে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে অর্থ সরান পি কে হালদার। এ ক্ষেত্রে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের মাত্র দুটি ঠিকানা ব্যবহার করেন পি কে ও তার সহযোগীরা। গত ৮ মার্চ নাহিদা ও রাফসানসহ ৪৫ জন সহযোগীর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর