রবিবার, ২১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

ছুটির দিনে বইপ্রেমীদের পদচারণে মুখর

মোস্তফা মতিহার

ছুটির দিনে বইপ্রেমীদের পদচারণে মুখর

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন বইপ্রেমীরা। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে গতকাল তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ছুটির দিনে মেলা জমে ওঠে, বইপ্রেমীদের পদচারণে মুখরিত হয় প্রাঙ্গণ। কর্মমুখর দিনের চেয়ে বিক্রিও একটু বেশি হয়। চিরায়ত এ দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে গতকাল মেলার তৃতীয় দিনে। ছুটির দিনের বেলা ১১টায় বইমেলার দ্বার উন্মোচনের পর লোকজনের আনাগোনা খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি। দুপুর গড়িয়ে বিকাল ঠিক ৫টার দিকেই জমজমাট হয়ে ওঠে মেলার দুই প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এ সময় কেউ আসেন সপরিবারে, কেউ দলবেঁধে। সন্ধ্যার আগেই দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলাপ্রাঙ্গণ। দর্শনার্থীর সংখ্যা আশাব্যঞ্জক হলেও বিক্রিতে হতাশ ছিলেন প্রকাশকরা। পাঠকের চেয়ে এ দিনের মেলায় বেশি আসেন দর্শনার্থী। সেলফি তোলার মধ্যেই নিজেদের ব্যস্ত রাখেন তারা। উপস্থিতির তুলনায় বিক্রি ছিল নগণ্য। তবে আশার কথা শোনালেন অন্বেষার স্বত্বাধিকারী শাহাদাৎ হোসেন। তিনি বলেন, ‘মেলায় দর্শনার্থীর আগমন বৃদ্ধি পেলে ধীরে ধীরে বিক্রিও বাড়বে। মাত্র তো শুরু, আগে মানুষ আসুক। বিক্রি একসময় বাড়বেই। এত তাড়াতাড়ি হতাশ হওয়ার কিছু নেই।’ এদিকে দর্শনার্থী আগমনের আধিক্য করোনাকালীন মেলার পরিবেশকে ছন্দময় করে তুললেও ধুলার ধূসরতা ছন্দপতন ঘটিয়েছে অমর একুশে বইমেলার। বাতাসের সঙ্গে ধুলার ওড়াউড়িতে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন মেলায় আগতরা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আগত সানজিদা রোজ বলেন, ‘অন্য দিন খুব একটা সময় পাই না বলে ছুটির দিনে মেলায় এলাম। কিন্তু এসে মনে হয় ভুল করলাম। অতিরিক্ত ধুলার কারণে নতুন শাড়িটাই মনে হয় পুরনো হয়ে গেল। এত বড় আয়োজন করল কিন্তু পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করল না! দায়িত্বহীনতার একটা সীমা থাকা উচিত।’ ধুলার বিরক্তি নিয়ে এই তরুণীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে। বইপ্রেমীদের ধুলার যন্ত্রণা থেকে রক্ষার জন্য প্রতিদিন মেলা প্রাঙ্গণে পানি ছিটানো হবে এমন প্রতিশ্রুতি মেলা শুরুর আগে দিলেও শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারে না বাংলা একাডেমি। যার কারণে প্রতি বছরই বাংলা একাডেমির দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মেলায় আগতরা। অন্যদিকে, মেলা শুরুর আগেই স্টল ও প্যাভিলিয়নের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা অমর একুশে বইমেলার নীতিমালায় উল্লেখ থাকলেও খোদ বাংলা একাডেমিই নীতিমালার লঙ্ঘন করেছে। গতকাল মেলার তৃতীয় দিনেও বাংলা একাডেমি তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণের একটি প্যাভিলিয়নের নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি। এ ছাড়া নামাজঘরের নির্মাণ শেষ করতে না পারার পাশাপাশি এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় টয়লেটের ব্যবস্থাও চালু করতে পারেননি একাডেমি কর্তৃপক্ষ। আর আশ্রয় ছাউনিগুলো এখনো ব্যবহার-উপযোগী হয়নি। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও এ দিনের মেলায় অনেকেই মাস্ক ছাড়া দিব্যি ঘুরে বেড়িয়েছেন। বলা চলে, অমর একুশে বইমেলা ২০২১-এ বাংলা একাডেমির উদাসীনতার চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে।

স্বাস্থ্যবিধি মানছে না পুলিশও : করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কড়া নির্দেশনা থাকলেও খোদ পুলিশ সদস্যরাই এসব নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করছেন না। গতকাল মেলার তৃতীয় দিনে মাস্কবিহীন অবস্থায় পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে, গতকাল তৃতীয় দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১০৪টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো আগামী প্রকাশনী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘হাসিনা ও রেহানা অ-রূপকথার দুই বোন’, মোনায়ের সরকারের ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের ভূমিকা’, মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু’, বিমল গুহের কাব্যগ্রন্থ ‘শেখ মুজিবের তর্জনী’, কথাপ্রকাশ এনেছে আহমদ রফিকের স্মৃতিকথা ‘স্মরণীয় বরণীয় আপন বৈশিষ্ট্যে’, হাসান আজিজুল হকের কাব্যগ্রন্থ ‘সুগন্ধি সমুদ্র পার হয়ে’, অন্যপ্রকাশ এনেছে শাইখ সিরাজের ‘করোনাকালে বহতা জীবন’, পাঠক সমাবেশ এনেছে ড. সুনীলকান্তি দের ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও ভারত’ ইত্যাদি।

মূলমঞ্চ : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ শীর্ষক আলোচনা। অনুষ্ঠানে আবুল মোমেন লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলা একাডেমির সহ-পরিচালক সাহেদ মন্তাজ। আলোচনায় অংশ নেন আবুল কাশেম ও ফওজুল আজিম। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক খুরশীদা বেগম।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর