রবিবার, ২১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
সংক্ষিপ্ত

বন্দরে কনটেইনারে দ্বিগুণ স্টোর রেন্ট আরোপের সুফল মিলছে

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বন্দরের এক সিদ্ধান্তে ভয়াবহ কনটেইনার জটের আশঙ্কা থেকে রক্ষা মিলেছে। পণ্যভর্তি কনটেইনারের ওপর দ্বিগুণ স্টোর রেন্ট আরোপ করার সিদ্ধান্তে দ্রুত সুফল আসছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আমদানি পণ্য সময়মতো ছাড় না করায় চট্টগ্রাম বন্দরে আবারও কনটেইনার জটের আশঙ্কা দেখা দেয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ ইয়ার্ড থেকে কনটেইনার জট কমাতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পণ্যভর্তি কনটেইনার দ্রুত  ডেলিভারি নিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। দ্রুত কনটেইনার ডেলিভারি না নিলে বর্ধিত স্টোর রেন্ট আরোপের নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে। পরবর্তীতে একই ইস্যুতে ২৮ ফেব্রুয়ারি আরও একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ব্যবসায়ীদের পুনরায় সুযোগ দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে ৪ মার্চ আরেকটি নোটিস দেয়। ওই বিজ্ঞপ্তির ফলে ১ মার্চের পরিবর্তে ৮ মার্চ থেকে বন্দরে পণ্যভর্তি কনটেইনারের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ জরিমানা কার্যকর করে। ফলে গত ৮ মার্চ থেকে স্বাভাবিক হচ্ছে কনটেইনার জট। দ্বিগুণ স্টোর রেন্ট আরোপের প্রথম সপ্তাহে কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৮টি। 

বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম স্বাক্ষরিত নোটিসে বলা হয়, বন্দর থেকে দৈনিক কনটেইনার ডেলিভারির ক্ষেত্রে ধীরগতির কারণে বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে কমন ল্যান্ডিং তারিখের পর ১১তম দিন হতে প্রযোজ্য স্ল্যাবের স্বাভাবিক ভাড়ার ওপর দুই গুণ হারে স্টোর রেন্ট আরোপ করা হলো। 

জানা গেছে, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে আমদানি হওয়া ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে সুফলও মিলছে। এই ধারাবাহিকতা থাকলে আরও কমে আসবে কনটেইনার সংখ্যা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কনটেইনার জট কমাতে জরিমানা নয়, অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করে এই সমস্যার সমাধান করা গেলে ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা উভয়েই উপকৃত হবে। নতুন নিয়মে বন্দরে কনটেইনার নামার ১১ দিন পর থেকে স্বাভাবিক ভাড়ার দ্বিগুণ জরিমানা বা স্টোর রেন্ট দিতে হচ্ছে। জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যের কনটেইনার চার দিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ পান আমদানিকারকরা। এরপর ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে প্রতি কনটেইনারের জন্য প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ৬ ইউএস ডলার ভাড়া দিতে হয়। তার পরবর্তী সপ্তাহ প্রতিদিন একই সাইজের কনটেইনারে ১২ ডলার এবং ২১ দিন থেকে প্রতিদিন ২৪ ডলার হিসেবে ভাড়া দিতে হয়। সেই হিসেবে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি কনটেইনারের ১১ দিন পর পরবর্তী ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ১২ ডলারের পরিবর্তে ২৪ ডলার এবং ২১ দিন পর ২৪ ডলারের পরিবর্তে ৪৮ ডলার জরিমানা দিতে হচ্ছে।

বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখতে বন্দর ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতার ১৫ ভাগ খালি রাখতে হয়। নইলে বন্দরে কনটেইনার পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ি চলাচল ঝুঁকিতে পড়ে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয় এবং ভয়াবহ কনটেইনার জটের সৃষ্টি হয়। ফলে পণ্যভর্তি কনটেইনারের ক্ষেত্রে ১১ দিন পর দ্বিগুণ জরিমানার বিধানটি আনা হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক আমদানিকারক তাদের কনটেইনার ছাড় না নিয়ে ফেলে রাখেন। দ্রুত ডেলিভারি নিতে তাদের নোটিস দিয়ে এর আগে সতর্ক করা হয়েছিল। তাতে কাজ না হওয়ায় ৮ মার্চ থেকে দণ্ড ভাড়া কার্যকর করা হয়েছে।

রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ে। ব্যবসায়ীদের নিজস্ব গুদাম না থাকায় তারা বন্দরের ইয়ার্ডকেই ব্যবহার করে থাকেন। ফলে প্রতি বছর রমজানের আগে এ ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। বিপাকে পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বন্দরে কনটেইনার জট শুরু হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি বন্দরের ইয়ার্ডে ছিল ৩১ হাজার ৪৮৭টি কনটেইনার। ২৩ ফেব্রুয়ারি সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৪১ হাজার ৩১টিতে। সাত দিনে কনটেইনার বাড়ে ৯ হাজার ৫৪৪টি। 

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, করোনা সংকটে ব্যবসায়ীরা লোকসানে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে দ্বিগুণ স্টোর রেন্ট আরোপের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। আমদানিকারকদেরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস নিশ্চিত করতে হবে।

গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার ছিল ৩৪ হাজার ৭১৬টি। ১৪ মার্চ ছিল ৩৩ হাজার ১৩৬টি। বন্দরে কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮টির। ৮ মার্চ দ্বিগুণ জরিমানা কার্যকর করার সময় বন্দরে কনটেইনার ছিল ৩৮ হাজার ৩৭৪টি। দ্বিগুণ স্টোর রেন্ট আরোপের ৮ দিনের মধ্যে কনটেইনার ডেলিভারি হয় ৩ হাজার ৬৫৮টি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর