শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে আইসিইউ শয্যা সংকট চরমে, ভোগান্তিতে রোগীরা

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে আইসিইউ শয্যা সংকট চরমে, ভোগান্তিতে রোগীরা

আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছেন না। বিশেষ করে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সংকটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলে মোট আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১১০টি। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই বলে জানালেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নগরীর সরকারি প্রধান দুই হাসপাতাল- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের এবং করোনা রোগীর চিকিৎসায় বিশেষায়িত হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালের ৩০টি আইসিইউর সবকটিতে রোগী ভর্তি। একই সঙ্গে পার্কভিউ হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন হসপিটাল, সিএসসিআর, ডেল্টা হেলথ ক্লিনিক, মা ও শিশু হাসপাতালে, ম্যাক্স হসপিটাল, ন্যাশনাল হসপিটাল ও মেডিকেল সেন্টারসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের ৮০টি আইসিইউ শয্যার সবকটিতেই রোগী ছিল।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘করোনার চিকিৎসায় আইসিইউর চেয়ে অক্সিজেন আর হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সবচেয়ে বেশি দরকার। এ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও রয়েছে। তবুও পরিস্থিতি যেভাবে বদলাচ্ছে, মানুষকে সচেতন হতেই হবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই যোগ করেন তিনি।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই রোগীদের জন্য চাহিদা বাড়তে শুরু করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। সা¤প্রতিক সময় করোনা শনাক্তের ঊর্ধ্বগতির কারণে আইসিইউ শয্যার রীতিমতো সংকট দেখা দিয়েছে। গত ১ এপ্রিল দুইজন এবং গতকাল করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন আরও ৫১৮ জন। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় মারা   গেছেন ৩৮৮ এবং শনাক্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ৪৮৩ জন।

সাংবাদিক মিজানুর রহমান নামের রোগীর স্বজন বলেন, বাবাকে করোনা সন্দেহে তিন দিন আগে ভর্তি করিয়েছিলাম চট্টগ্রাম মেডিকেলে। পরপর দুইবার টেস্টের পরও করোনা নেগেটিভ আসে। কিন্তু তার পিতার অক্সিজেন সিচুরেশন আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে পাগলের মতো চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চষে বেড়ান। কিন্তু একটি আইসিইউ শয্যাও পাওয়া যায়নি। একই কথা বললেন করোনা রোগীর আরও স্বজনরা।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবদুর রউফ বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও জেনারেল হাসপাতাল এই দুইটিতে মোট ১৬টি আইসিইউ ও চারটি এইচডিইউর সবকটিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। একই অবস্থা বেসরকারি হাসপাতালগুলোরও। বেসরকারিগুলোতেও একই অবস্থা।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ওই রোগীর জন্য স্বজনরা সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেও ব্যবস্থা করতে পারেননি।

বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রেজাউল করিম বলেন,    ‘আমাদের হাসপাতালে ৯টি আইসিইউ ও এইচডিইউ শয্যা রয়েছে। মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে এর সবটিতেই রোগী ভর্তি রয়েছে। এছাড়াও ৬০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডের সবকটিতে রোগী আছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর    গণমাধ্যমকে বলেন, পরিস্থিতি সত্যি ভালো নয়। মানুষ কোনো বিধিনিষেধ মানেনি। তাই এই অবস্থা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে কিছু শয্যা খালি রয়েছে। ঢাকায় পুরোপুরি ভর্তি। কিন্তু যে হারে চট্টগ্রামে রোগী বাড়ছে, তাতে কীভাবে সেবা দেব, ভাবিয়ে তুলছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিকল্প হিসেবে আমরা হলি ক্রিসেন্ট ও  রেলওয়ে হাসপাতাল পুনরায় চালু করব। পর্যাপ্ত অক্সিজেন হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে। আইসিইউতে খালি নেই। যদিও হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা বেশি দরকার।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর