রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

মেগা প্রকল্পে বরিশালে দিন বদলের স্বপ্ন

ভাঙন রোধে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি স্থানে নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ চলছে

রাহাত খান, বরিশাল

বিপুল বিনিয়োগের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে বরিশাল। ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের পায়রা নদীর ওপর দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ দিকে। ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর এবং কুয়াকাটা পর্যন্ত ছয় লেন মহাসড়কের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর এবং কুয়াকাটা পর্যন্ত রেললাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইও শেষ। বরিশাল-ভোলা সড়কের লাহারহাট-ভেদুরিয়া পয়েন্টেও সেতু নির্মাণের তোড়জোড় চলছে। এদিকে নদী ভাঙন রোধে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশালের চারটি স্থানে নদীর তীর সংরক্ষণ এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে। এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সড়ক যোগাযোগে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হবে দক্ষিণাঞ্চলে। অপরদিকে নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ শেষ হলে ভাঙনরোধসহ নান্দনিক হবে বরিশালের চারটি নদীর বিস্তীর্ণ তীর। সেসব জায়গায় গড়ে উঠবে পর্যটন।

বরিশাল থেকে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালুর লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ পায়রা নদীর লেবুখালী পয়েন্টে সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেড সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে। ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯.৭৬ মিটার প্রস্থ এই সেতুর প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ। আগামী জুনে এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্ট্রেট পদ্ধতিতে নির্মিত সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানান সেতুর প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হালিম। ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। বর্তমান মহাসড়কের দুই পাশে প্রশস্ত করে ১১০ ফিট প্রশস্ত ছয় লেন মহাসড়ক নির্মাণের জন্য চার জেলায় মোট ৩০২.৭ একর জমি অধিগ্রহণ করবে সড়ক বিভাগ। ফরিদপুরে ৭০.৯০ একর, মাদারীপুরে ৪৫.৬৮ একর, বরিশালে ৯০.৫৮ একর এবং পটুয়াখালী জেলায় বর্তমান মহাসড়কের দুই পাশে ৯৫.৫৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন এবং এই অধিগ্রহণে ১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। পায়রা সমুদ্র বন্দরের সুবিধা কাজে লাগানোর পাশাপাশি দেশের সর্ব দক্ষিণের কুয়াকাটা পর্যন্ত রেললাইন বিস্তৃত করতে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙ্গা থেকে পায়রা সমুদ্রবন্দর ও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা পর্যন্ত রেললাইন করার ঘোষণা দেন। এরপরই রেললাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়ে সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এখন জমি অধিগ্রহণ করে কাজ শুরুর অপেক্ষা।

সড়ক যোগাযোগে দেশের মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা ভোলাকে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের আওতায় আনতে ২০১৩ সালে বরিশালের লাহারহাট পয়েন্ট থেকে ভোলার ভেদুরিয়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে এই সেতু নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। এই সেতু নির্মাণে ভারতের এসটিইউপি কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড, যুক্তরাজ্যের সিওডব্লিউআই কনসাল্টিং এবং বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড ও ডেভ কনসালট্যান্টস লিমিটেডের যৌথ সমীক্ষা ২০১৯ সালের আগস্টে শেষ হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ)। নদী বেষ্টিত বরিশালের মানুষের অন্যতম সমস্যা নদী ভাঙন। নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে প্রতিনিয়ত উদ্বাস্তু হচ্ছে মানুষ। নদী ভাঙন রোধ ও নাব্য বাড়ানোসহ নদীর তীর সৌন্দর্যবর্ধন করে পর্যটন বান্ধব করতে ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে বরিশালে। জেলার সবচেয়ে নদী ভাঙনপ্রবণ মেঘনার তীরের উলানিয়ায় ৩৮৬ কোটি টাকা, কীর্তনখোলা তীরের চরবাড়িয়ায় ৩৭০ কোটি, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের দোয়ারিকা সেতুসহ (বীর-শ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর) আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম রক্ষায় সুগন্ধা নদীর চর অপসারণ ও তীর সংরক্ষণের ২৮৩ কোটি টাকার কাজ চলছে। তেঁতুলিয়া নদী ভাঙনের কবল থেকে বাকেরগঞ্জের দুর্গাপাশা লঞ্চঘাট, বাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের সহায় সম্পদ রক্ষায় নদীর তীর সংরক্ষণের ৭১২ কোটি টাকার টেন্ডার সম্পন্ন করে কাজ শুরুর অপেক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। বছরে ছয় মাসেরও বেশি সময় জলাবদ্ধতায় নাকাল জেলার উজিরপুরের সাতলা-বাঁগধার বিলাঞ্চলে ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় হাইটেকপার্ক নির্মাণ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। তথ্য প্রযুক্তি খাতে এখানে হাজারো লোকের কর্মসংস্থান হবে। প্রশিক্ষণ পাবে হাজারো মানুষ। মহিলা পলিকেটনিক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও ছোট ও মাঝারি অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে বরিশালের যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সার্বিক অবকাঠামো। বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শিল্পপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে দুই হাত ভরে উন্নয়ন দিয়েছেন।

পিছিয়ে পড়া বরিশাল এখন পদ্মা সেতু, উন্নত সড়ক যোগাযোগ, পায়রা বন্দর, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ নানা কারণে নতুন যুগের ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটনের আকর্ষণ। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের সর্ব দক্ষিণের কুয়াকাটা পর্যন্ত সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ সময়ের ব্যাপার বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর