রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ইসলামের শত্রু হেফাজত : শেখ সেলিম

-নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, যারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ ধরনের জঘন্য কাজ করে তারা বাংলাদেশের শত্রু, স্বাধীনতার শত্রু, জনগণের শত্রু, তারা ইসলামেরও শত্রু। যারা বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, আমাদের অর্জন, গৌরব নস্যাতের চেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দরকার হলে ট্রাইব্যুনাল করে অবিলম্বে তাদের বিচার করতে হবে। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানান।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের গতকালের বৈঠকে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে শেখ সেলিম এসব কথা বলেন।

সংসদের সিনিয়র সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম আরও বলেন, জঙ্গিদের দিয়ে ইসলামের হেফাজত হতে পারে না। হেফাজতের নামে যারা জঙ্গি সন্ত্রাস কার্যক্রমে লিপ্ত হয় এবং বিএনপি-জামায়াতের সহযোগী হিসেবে যারা ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে তারা কোনোভাবেই ইসলামকে হেফাজত করতে পারে না, ইসলামকে হেফাজত করবে আল্লাহ। তারা সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে ধর্মভীরু মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। এরা রাষ্ট্রবিরোধী, ইসলামবিরোধী, এরা সন্ত্রাসী, এরা জঙ্গি, রাষ্ট্রের শত্রু, মানবতার শত্রু, দেশের শত্রু। এদের কোনো ছাড় দেওয়া যেতে পারে না। তিনি বলেন, হেফাজতের জঙ্গিরা যেসব মাদরাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় মানুষ হত্যা করে, মানুষের বাড়িঘর আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেয়, স্থাপনা নষ্ট করে সেসব মাদরাসা বন্ধ করে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি যারা বিন্দুমাত্র বিশ্বাস রাখে তারা কোনো দিন এ জঘন্য কাজ করতে পারে না। তাদের মনে রাখতে হবে এটা তালেবানি রাষ্ট্র নয়, এটা পাকিস্তান নয়, সন্ত্রাসী জঙ্গিদের বাংলার মাটিতে কোনো স্থান নেই। সরকারকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাধীন দেশে এভাবে চলতে পারে না। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর জন্য আমরা অনেক কিছু সহ্য করে গেছি আর কোনো কিছু সহ্য করা হবে না।

শেখ সেলিম বলেন, ২৭ মার্চ বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। ১০ জন পুলিশকে বোমা মেরে আহত করেছে। পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আক্রমণ করে পুড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি-হেফাজতের সমর্থকরা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, এসপি অফিস, থানায় আগুন দেয়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল পর্যন্ত তারা ভাঙচুর করে এবং আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রেস ক্লাবে আগুন দিয়ে তারা প্রেস ক্লাব সভাপতি রিয়াজুদ্দিন জামিলসহ ১১ সাংবাদিককে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভনের বাড়িতে আগুন দেয় এবং আমাদের কোরআন শরিফকে পুড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ, বসুন্ধরা এবং ৩০০ ফিট রাস্তায় ও স্থাপনায় আগুন দেয়, গাড়ি ভাঙচুর করে।

শেখ সেলিম বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের জঙ্গি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিল অতিসত্বর সে মামলা তদন্ত করে সে সময় যাদের নামে মামলা হয়েছিল তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশ অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দিন পরিশ্রম করে বাংলাদেশের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে যখন একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছেন আন্তর্জাতিকভাবে যখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বেড়ে গেছে ঠিক তখনই সেই অপশক্তি আবার এ কাজ করছে। পৃথিবীতে কোথাও স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করতে দেওয়া হয় না। বাংলাদেশে তাদের জিয়াউর রহমান রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। যারা এ দেশটাকে ধ্বংস করতে চায়, দেশকে পাকিস্তান বানাতে চায় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে, এদের কোনো ক্ষমা নেই। বঙ্গবন্ধু ক্ষমা করেছিলেন মহানুভবতার কারণে, কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে কঠোর হতে হবে। এ অপশক্তিকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশের ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদির যোগদান এবং এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ সেলিম বলেন, ২০১৪ সালের ১৭ জুন নরেন্দ্র মোদি যখন প্রথম নির্বাচনে জয়লাভ করেন তখন বাংলাদেশের কেউ (অভিনন্দন) দেননি, খালেদা জিয়া তাঁকে অভিনন্দন জানান। বিএনপি অফিসে মিষ্টি বিতরণ করেছিল তারা। একে ওকে খাওয়ায়। ওমুক নেতা, তমুক নেতাকে খাওয়ায়। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদি প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে এলে খালেদা জিয়া তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিগলিত হন। ২০১৬ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন। খালেদা জিয়া ৭ জুন সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে বিগলিত হাসি দিয়ে হ্যান্ডশেক করেন। হাত আর ছাড়েন না। সে ছবি আমার কাছে আছে মাননীয় স্পিকার। আপনার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তখন মোদি ভালো ছিলেন। এখন সেই মোদি খারাপ হয়ে গেলেন! এর ভিতর কী গোলমালটা হয়েছে? কেন খারাপ? এমন কী হলো তা দেশবাসী জানতে চায়।

 

 

 

সর্বশেষ খবর