বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

স্মৃতির আড়ালে ভবানীপুরের সেই জমিদারবাড়ি

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

স্মৃতির আড়ালে ভবানীপুরের সেই জমিদারবাড়ি

কালের বিবর্তনে পুরাতন দেয়ালের পলেস্তারা উঠে গেছে। ধসে পড়েছে ছাদ-দেয়াল। তবুও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে ভবানীপুর জমিদার বাড়ি। অবহেলায় অযত্নে ইতিহাসের পাতা থেকেও হারিয়ে যেতে বসেছে জমিদার বাড়ি। নওগাঁ শহর হতে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে শাহাগোলা ইউনিয়নের ভবানীপুর জমিদার বাড়ি। এলাকার মানুষের কাছে ভবানীপুর রাজবাড়ি বলেই পরিচিত। ভগ্নপ্রায় জমিদার বাড়ির পিছনের অংশে এখনো বসবাস করছেন কুমার প্রতাপ শঙ্কর চৌধুরীর স্ত্রী চিত্রা চৌধুরী, ছেলে অভিজিৎ চৌধুরী, মেয়ে স্নেহা চৌধুরী, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনি। প্রতাপ শঙ্কর চৌধুরীর ছেলে অভিজিৎ শঙ্কর চৌধুরী ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, জমিদার পরিবারের পূর্বপূরুষ ছিলেন রঘুরামশূর চৌধুরী তার স্ত্রী দুর্গাময়ী নাটোরের শূর বংশের সন্তান। তিনি ভবানীপুরে এসেছিলেন রাজত্বের কাজে। এলাকাটি তাঁর পছন্দ হওয়ায় ভবানীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বাড়ি নির্মাণ করেন ও পরবর্তীতে জমিদারি পত্তন করেন। এদের সন্তান কালীনাথ চৌধুরী। কালীনাথ চৌধুরীর দুই স্ত্রী রাজলক্ষী ও বসন্ত কুমারী। বসন্ত কুমারীর সন্তান গ্রিরিজা শঙ্কর চৌধুরী। জমিদার গ্রিরিজা শঙ্কর চৌধুরীর সময় জমিদারির উৎকর্ষ সাধিত হয়।

তাঁর মৃত্যুর পর তার ছেলে প্রিয় শঙ্কর চৌধুরী জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করে জমিদারি পরিচালনা করতে থাকেন। জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরীর স্ত্রীর নাম ছিল লাবণ্যপ্রভা চৌধুরানী। তাঁদের ছিল ছয় ছেলে ও ছয় মেয়ে। ছেলে প্রণব শঙ্কর চৌধুরী, প্রদ্যুত শঙ্কর চৌধুরী, প্রভাত শঙ্কর চৌধুরী, প্রতাপ শঙ্কর চৌধুরী, প্রবীর শঙ্কর চৌধুরী ও প্রশান্ত শঙ্কর চৌধুরী। মেয়ে আলো রানী, জ্যোৎস্না রানী, কৃষ্ণা রানী, সুপ্রিয়া রানী, প্রভাতী রানী ও বাসবী রানী। জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরীর আমলে জমিদারির ব্যাপক বিস্তারও ঘটে। ১৯১০ সালে জমিদার পরিবারের উদ্যোগে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি হওয়ার পর ১৯৫৮ সালের দিকে জমিদার প্রিয় শঙ্কর চৌধুরী সপরিবারে কলকাতা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তাঁর চতুর্থ ছেলে প্রতাপ শঙ্কর চৌধুরী দ্বিমত পোষণ করেন। পরে তিনি প্রতাপ শঙ্করকে রেখেই কলকাতা চলে যান। বর্তমানে অভিজিৎ চৌধুরী এই জমিদার প্রাসাদের এক অংশে জরাজীর্ণ ভবনে বসবাস করছেন। এই জমিদারদের অনেক সম্পত্তি ঢাকা, বগুড়া ও দিনাজপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বলে তিনি জানান।

নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান জানান, জমিদার বাড়িতে একটি বড় লাইব্রেরি ছিল। সেখানে খ্যাতনামা লেখকদের লেখা গ্রন্থে পরিপূর্ণ ছিল। দ্বিতল ও তৃতীয় তলা কয়েকটি ভবন সমন্বয়ে ছিল মূল প্রাসাদ। প্রতিটি ভবনের সামনে ছিল প্রশস্ত আঙিনা। দিনে দিনে জমিদার বাড়ির মূল্যবান সম্পদ চুরি ও লুট হয়ে যাচ্ছে। সুবিশাল প্রাসাদ এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর