মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

লকডাউনের প্রভাব পড়েনি বন্দরে

স্বাভাবিক রয়েছে বন্দর কার্যক্রম, আসন্ন পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় সংশ্লিষ্টরা

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

চলমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। গত বছরের মার্চে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করার পর চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল অচল। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর সচল থাকলেও ব্যবহারকারীরা অচল থাকায় বন্দরে এর  নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। ঘোষিত লকডাউনের কারণে গত বছরের মার্চের মতো চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, বন্দরের সব কার্যক্রম বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। ২০২০ সালের লকডাউনের সঙ্গে এবারের লকডাউনের মধ্যে ভিন্নতা ছিল। এবার বন্দর ব্যবহারকারীরা সচল রয়েছেন। বন্দরে জাহাজ আসা স্বাভাবিক রয়েছে, পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক এবং বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আসন্ন লকডাউন পরিস্থিতিতে সরকার শিল্প-কারখানা ও বন্দর ব্যবহারকারীদের যদি চাপে ফেলে, তার প্রভাব সরাসরি বন্দরেও পড়বে।

বন্দর সূত্রমতে, এক দিনে গড়ে ৪ হাজার এককের বেশি কনটেইনার বন্দর  থেকে ডেলিভারি হয়। গত ৭ এপ্রিল ডেলিভারি হয়েছে ৪ হাজার ১৮৪ একক। মূলত প্রধান সড়ক সচল থাকায় পণ্য ডেলিভারিতে কোনো ব্যাঘাত হচ্ছে না। গতকাল পর্যন্ত বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ পণ্যভর্তি কনটেইনার ও কার্গো জাহাজ রয়েছে ৭৭টি। এর বাইরে জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ রয়েছে ১২টি। বন্দরের বিভিন্ন জেটিতে বার্থিংয়ে রয়েছে ১৬টি পণ্যবাহী জাহাজ। যেগুলো  থেকে পণ্য খালাস চলছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে আমাদের এখানে যে উদাসীনতা রয়েছে, তাতে কঠোর লকডাউন দেওয়া উচিত। কিন্তু তাতে যদি দেশের অর্থনীতি কলাপ্স হয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে কিছু বিষয়কে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখতে হবে। যেমন কল-কারখানা চালু রাখা, বন্দরকেন্দ্রিক যান চলাচল লকডাউনমুক্ত রাখা। তাতে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সচল থাকবে। যদি গত বছরের মতো লকডাউনে শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখা হয়, তাতে দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। বিশেষ করে গার্মেন্টের মতো শিল্পের ক্ষেত্রে যেসব কার্যাদেশ চলমান রয়েছে, সেগুলোকে পুরোপুরি বাস্তবায়নের সুযোগ দিতে হবে। গতবার লকডাউনের শুরুতে শিল্প-কারখানা বন্ধ ছিল। ফলে একজন গার্মেন্ট মালিক পণ্য জাহাজ থেকে নামিয়ে বন্দর থেকে আর ডেলিভারি নেননি। কারণ কারখানা খোলা না থাকায় সেই পণ্য তিনি কোথায় নিয়ে রাখবেন। ফলে বন্দরে আটকা পড়েছিল। সামনে যেন সে রকম পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং এক্সপোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সহসভাপতি খন্দকার লতিফুর রহমান আজিম বলেন, গতবার গার্মেন্টস এক্সেসরিজের ৯৮ শতাংশ লোকালই উৎপাদন এবং সরবরাহ করা হয়েছে বিধায় কোনো এক্সেসরিজ আমদানি করতে হয়নি। আমাদের এবারও উৎপাদন সচল রাখতে হবে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন পরিচালক মুনতাসির রুবাইয়াত বলেন, নৌ-বাণিজ্য দফতরের সার্কুলারে নিশ্চিত করা হয়েছে বন্দরকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের চলাচলে কোনো ব্যাঘাত হবে না। তবে পুরোপুরি লকডাউনে চলে গেলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক হবে।

মোংলা বন্দরে স্বাভাবিক কার্যক্রম : দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্দরের অপারেশনালসহ সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম স্বাভাবিক রাখতে মোংলা বন্দরে ২৪ ঘণ্টা স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। গত এক সপ্তাহে এ বন্দরে জাহাজ আগমন করে ২১টি, গত বছর একই সময়ে জাহাজ আগমন করেছিল ১৮টি। কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৬ লাখ ৫৬৭ মেট্রিক টন, গত বছর একই সময়ে যা ছিল ২ লাখ ৩ মেট্রিক টন। কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩৭৩ টিইইউজ এবং ৭ হাজার ১১৭ মেট্রিক টন। এ ছাড়া এ সময়ে বন্দর থেকে ২৭২টি গাড়ি ডেলিভারি করা হয়েছে। জাহাজ, কার্গো, গাড়ি ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে সব সূচক ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় এ বন্দরের আয়ও স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মোংলা বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান, লকডাউনের মধ্যে বন্দর কার্যক্রম সচল রাখতে কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারীর সমন্বয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর