রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত দুই ব্যাংকার

কোটি কোটি টাকা আয়ের তথ্য

মাহবুব মমতাজী

প্রায় দেড় যুগ ধরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে এবার দুই ব্যাংক কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সম্প্রতি তাদের সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আলোচিত ওই দুই ব্যাংক কর্মকর্তার নাম আতিকুল হাসান ও এস এম আহমেদুল হক ওরফে মনন। আতিকুল ব্র্যাক ব্যাংকের ইন্টার ব্যাংক ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট শাখার প্রিন্সিপ্যাল অফিসার এবং আহমেদুল হক ব্যাংক এশিয়ার অল্টারনেট ডেলিভারি চ্যানেল শাখায় কর্মরত। এর মধ্যে অতিকুলকে চাকরিচ্যুত করেছেন ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সিআইডি-সূত্র জানান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর প্রেসের মেশিনম্যান আবদুস সালাম ও তার খালাতো ভাই জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া ওরফে মুন্নুর সহযোগী হিসেবে সারা দেশে প্রায় ৫০ জনের একটি চক্র সক্রিয় ছিল। এ চক্রের গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য আতিকুল হাসান ও আহমেদুল হক। দীর্ঘদিন ধরে তারা জসীমের কাছ থেকে ফাঁস করা প্রশ্ন নিয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মাঝে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। জসীমের উদ্ধার হওয়া গোপন ডায়েরিতে চক্রের সদস্য হিসেবে আতিকুল হাসান ও আহমেদুল হক মননের নামও পেয়েছে সিআইডি। তাদের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন ও সম্পদের খোঁজ চলছে বলেও জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে আতিকুল জানিয়েছেন তার গ্রামের বাড়ি সাভারে। বাবার নাম শাহাদত আলী। তিনি একজন শিক্ষক। মায়ের নাম গোলেনুর বেগম।

মেডিকেল প্রশ্নফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম ছিলেন তার বাবার ছাত্র। সেই সূত্রে দীর্ঘদিন ধরেই জসীমের সঙ্গে তার পরিচয়। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা এলে জসীম তার কাছে শিক্ষার্থী চাইতেন। বিভিন্ন সময়ে কিছু শিক্ষার্থী জোগাড় করেছেন বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। এস এম আহমেদুল হক মনন মিরপুরের ইব্রাহিমপুরে থাকেন। তার বাবার নাম এস এম মোজাম্মেল হক। মিরপুরে একই এলাকায় থাকার সুবাদে জসীমের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা এলেই জসীম তাকে শিক্ষার্থী জোগাড়ের জন্য বলতেন। প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ অর্থ মনন তার স্ত্রী ডা. তানিয়া রহমানের অ্যাকাউন্টে লেনদেন করেছেন। তাকেও ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডির অর্গানাইজ ক্রাইম ইউনিট।

সিআইডির অর্গানাইজ ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় হওয়া মানি লন্ডারিং মামলাটি তদন্ত করছি আমরা। এতে অনেকেরই সম্পৃক্ততা পাচ্ছি। দুজন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’

ব্র্যাক ব্যাংকের লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্সের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আতিকুল হাসান ব্র্যাক ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ইন্টার ব্যাংক ক্যাশ ম্যানেজমেন্টের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার ছিলেন। প্রশ্নফাঁসের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠায় তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মাধবী রানী পাল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ওই দুই ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের নাম জসীমের গোপন ডায়েরিতে ছিল, আত্মীয়স্বজনের নামও পাওয়া গিয়েছিল। এখন তাদের বিষয়ে শক্ত তথ্য-উপাত্ত খোঁজা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে আতিকুল হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। আহমেদুল হক নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে জানান, তাকে মানি লন্ডারিংয়ের কিছু বিষয়ে সিআইডিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জসীমের ডায়েরিতে তার নাম পাওয়া গেছে বলে তিনি জেনেছেন। তবে তিনি জসীমকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিল চক্রটি। গত বছরের ১৯ জুলাই সিআইডির হাতে চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, সদস্য জাকির হাসান দীপু, পারভেজ হোসেন, এস এম সানোয়ার ও মোহাইমিনুল ইসলাম বাঁধন গ্রেফতার হলে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসে। দেড় যুগে শত শত শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছেন তারা।

সর্বশেষ খবর