রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

গুলশানের গৃহবধূ ঝিলিককে বালিশ চেপে মারা হয়!

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে শ্বশুরবাড়িতে গত ২ এপ্রিল রাতে গৃহবধূ হাসনা হেনা ঝিলিকের (২৩) মৃত্যু হয়। গত ১১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার রিমান্ড শেষে ঝিলিককে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তার স্বামী সাকিব আলম মিশু (৩৮)।

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে মিশু বলেছেন, ঝিলিক তাকে সব সময় সন্দেহ করত। ওই রাতে সে তাকে এক কথা বারবার বলছিল, তাই সে রেগে গিয়ে তার মুখে এক মিনিটের মতো বালিশ চাপা দিয়ে রাখেন। এরপর দেখেন ঝিলিক আর কথা বলছে না। পরে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে উঠে দেখেন ঝিলিকের হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আছে। গত ৯ এপ্রিল মিশুকে দুই দিনের দ্বিতীয় দফার রিমান্ডে আনেন পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তারা। এরআগে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মিশু বলেছেন, ঝিলিক তাকে পরকীয়া সম্পর্ক থাকার বিষয়ে সবসময় সন্দেহ করত। ঘটনার দিন ২ এপ্রিল রাতে ঝিলিক ভিডিও কলে মিশুকে দেখিয়ে ১০টি ঘুমের ওষুধ সেবন করে। এটা দেখে মিশু ভালুকা যাওয়া বাতিল করে গাড়ি ঘুরিয়ে ঢাকায় রওনা দেন। এরই মধ্যে মিশুর মা ফোন করে বলেন, ঝিলিক তার ছেলে আয়মানকে কাজের মেয়ের কাছে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। রাত ১টার দিকে মিশু গুলশান এলাকা থেকে তালা খোলার একজন মিস্ত্রিকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় যান। সেখানে বেডরুমের দরজার তালা ভেঙে দেখেন ঝিলিক অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে। ঝিলিককে উদ্ধার করে গাড়িতে করে সেন্ট্রাল হসপিটালে নিয়ে যান। সেখানে অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু মিশু সুইসাইড কেস হতে পারে ভেবে ভয় পেয়ে ঝিলিককে বাসায় নিয়ে আসে। ঝিলিককে গোসল করিয়ে দিয়ে তরমুজের জুস খাওয়ায়। এরপর ঝিলিককে বিছানায় শুইয়ে দেন। রাত ২টার দিকে মিশু পাঁচটি মরফিন ইনজেকশন নেন। এরপর দুটি ঘুমের ওষুধ সেবন করেন। বিছানায় ঝিলিকের পাশে শুয়ে পড়েন। এরই মধ্যে ঘুমের মধ্যেই ঝিলিক বলতে থাকে- ‘তুমি মেয়ে নিয়া ঘুরতে গেছিলা।’ মিশু তখন তার মাথার নিচের দুটি বালিশ নিয়ে ঝিলিকের মুখে চেপে ধরেন। প্রায় ১ মিনিট ধরে চেপে রাখার পর ঝিলিকের মুখ থেকে কথা বন্ধ হয়ে যায়। মিশু ঘুমিয়ে পড়েন।

পরদিন সকাল ৭টার দিকে মায়ের ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙে মিশুর। পাশে দেখেন যে ঝিলিক শুয়ে আছে। তার মা ঝিলিকের শরীর ধরে বলেন যে ওর শরীর একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে। এরপর মিশু তার ম্যানেজারের সহায়তায় ঝিলিককে গাড়িতে তোলেন। গাড়ির পিছনের সিটে ঝিলিককে শুয়ে রাখা হয়। হাতিরঝিলে আসার সময় গাড়িটি রোড ডিভাইডারে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। এরপর ঝিলিককে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান যে আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

এ ঘটনায় গত ৩ এপ্রিল ঝিলিককে হত্যার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলা করেন তার মা তহমিনা হোসেন আসমা। মামলায় আসামি করা হয় ঝিলিকের স্বামী সাকিব আলম মিশু, দেবর ফাহিম আলম, শাশুড়ি সাঈদা আলম, শ্বশুর জাহাঙ্গীর আলম এবং বাসার ম্যানেজার আশিষকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর