মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় কতটা এগোল মেগা প্রকল্প

২০২২ সালেই যান চলবে পদ্মা সেতুতে, বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ শেষ ৬৫ শতাংশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রূপনগর আবাসিক এলাকা থেকে মিরপুর-১২ এর দিকে আসতে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে কয়েকজন শ্রমিককে দেখা গেল কাজ করছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে গত ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। তারপরও সীমিত পরিসরে গতকাল সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেও শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে মেট্রোরেল প্রকল্পটিতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চলতি বছরের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের উত্তরা আগারগাঁও অংশের কাজ শেষ করে ফার্মগেট পর্যন্ত উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সে কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লকডাউনেও সীমিত পরিসরে চলছে প্রকল্পের কাজ। গত সপ্তাহে অনলাইনে ‘ডিএমটিসিএল’র মেট্রোরেল-৬ প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক। তিনি জানান, প্রথম অংশ উত্তরা তৃতীয় ফেইজ থেকে আগারগাঁও-এর অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিলের অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ। তবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৬২ শতাংশ। এমডি জানান, ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ১৩ দশমিক ২৭৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। ডিপোর অভ্যন্তরে ১৬ দশমিক ৯০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপর ১০ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক কাস্টিং সম্পন্ন হয়েছে। মেট্রোরেলের ‘বগি’ এরই মধ্যে জাপান থেকে মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে। এত গেল রাজধানীর মেট্রোরেল প্রকল্পের কথা। এখন দেখা যাক, করোনা মহামারীতে কতটা এগোল স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ সরকারের অন্যান্য মেগা প্রকল্পের কাজ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য সম্প্রতি সেতু বিভাগ থেকে পদ্মা সেতুসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এই প্রতিবেদনে সেতু বিভাগের অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে।  

পদ্মা সেতু : সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিতব্য পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ ৫টি প্যাকেজের মধ্যে মাওয়া সংযোগ সড়ক, জাজিরা সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া,-২ এর নির্মাণকাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূল সেতুর ভৌত অগ্রগতি ৯২ দশমিক ৫ ভাগ। অন্যদিকে নদী শাসনের কাজের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৫ ভাগ। এরই মধ্যে সেতুর ওপর স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি প্রকল্পটি পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ২০২২ সালের জুনের মধ্যে সম্পূর্ণ অবকাঠামোর কাজ শেষ করে যানবাহন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল : সরকারের মেগা প্রকল্পের অন্যতম আরেকটি প্রকল্প হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দমমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। এ প্রকল্পে প্রথম টিউবের রিং স্থাপনসহ বোরিং শেষে দ্বিতীয় টিউবের বোরিংসহ অন্যান্য নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী প্রকল্পটির অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ।

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি লেন নির্মাণ) : গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত মোট ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লেনের মধ্যে সেতু বিভাগের ১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলিভেটেড অংশ নির্মাণকাজ চলছে। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৩ শতাংশ।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য র‌্যাম্পসহ ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে। সেতু বিভাগ প্রতিবেদনে জানিয়েছে যথাসময়ে এর নির্মাণকাজ শেষ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া হয়ে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত ১৬ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের          একটি। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি নির্মাণে চীনা অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে যথাসময়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে বলে আশা করছে সেতু বিভাগ। এ ছাড়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত র‌্যাম্পসহ ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে বিস্তারিত ডিজাইন চূড়ান্ত করে ভৌত কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ২৪ শতাংশ।  এসব প্রকল্পের বাইরে ঢাকা ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কে মেঢ়না নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, ঢাকা শহরের সাবওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে সেতু বিভাগের প্রতিবেদনটিতে। তবে দ্বিতীয় দফা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এসব প্রকল্প যথাসময়ে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানান, কভিড-১৯ মহামারীর পর গত বছর মার্চ থেকে সরকারের বেশ কয়েক দফা লকডাউন ও ছুটি ঘোষণার কারণে বিঘ্নিত হয়েছে মেট্রোরেলসহ সরকারের অন্যান্য মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ। প্রথম পর্যায়ে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি পরামর্শক, প্রকৌশলী নিজ দেশে চলে যান। পরে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে সংক্রমণ কমতে থাকায় আবারও পুরোদমে শুরু হয় প্রকল্পগুলোর কাজ। এরই মধ্যে কভিড-১৯ প্রতিরোধে সারা দেশের মানুষের মধ্যে টিকা কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। টিকার আওতায় এসেছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে কর্মরত বিদেশিরাও। কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, পদ্মা বহুমুখী প্রকল্পসহ সেতু বিভাগের আওতাধীন সব উন্নয়ন প্রকল্পে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি পরামর্শক প্রকৌশলী ও অন্যান্য জনবলকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়েছে। চলমান সব উন্নয়ন প্রকল্পে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর ফলে পদ্মা বহুমুখী সেতুসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর