রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
স্বজন ও শ্রমিক সংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদন

আট বছরেও রানা প্লাজা ধসের মূল মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি

নাজমুল হুদা, সাভার (ঢাকা)

আট বছরেও রানা প্লাজা ধসের মূল মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির আট বছর পূর্তিতে গতকাল সকালে সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শ্রমিক সংগঠন, আহত শ্রমিক ও নিহতদের স্বজনরা। এ সময় নিহত শ্রমিকদের জন্য দোয়া করা হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আলোচিত রানা প্লাজা ধসের মূল মামলায় ৭ বছর আগে বিচার শুরু হলেও এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র ও বিএনপি নেতা রিফাত উল্লাহ এবং কাউন্সিলর যুবদল নেতা মোহাম্মদ আলী খানের পক্ষে মামলাটি হাই কোর্টে স্থগিত থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। এ মামলায় অভিযুক্ত ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন কেবল ভবন মালিক সোহেল রানা। বাকি আসামিদের মধ্যে জামিনে ৩২ জন, পলাতক ছয়জন ও মারা গেছেন দুজন। এদিকে গতকাল সকালে রানা প্লাজা ট্রাজেডির আটবছর পূর্তিতে  সাভারের ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শ্রমিক সংগঠন, আহত শ্রমিক ও নিহতদের স্বজনরা। এ সময় নিহত শ্রমিকদের জন্য দোয়া করা হয়। এ ছাড়া রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার ও নিহত-আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থাসহ নানা দাবি করেন তারা। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এ পর্যন্ত ভবন মালিক সোহেল রানা, তার পরিবার, সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়রসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়। এরমধ্যে সম্পদের হিসাব দাখিল না করা সংক্রান্ত নন সাবমিশন মামলায় ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট রানার তিন বছর কারাদন্ড হয়েছে। এ মামলায় তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়। এদিকে, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে দুদকের মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার মা মর্জিনা বেগমের ছয় বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড হয়।

পাশাপাশি তার ছয় কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯০ টাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে আদালত। এ ছাড়া ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের আরেকটি মামলা চলমান রয়েছে।

সোহেল রানার আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, রানার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগের মূল মামলার অভিযোগ গঠন হয় পাঁচ বছর আগে। ঘটনার পরপরই রানাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে কোনো সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি, তাকে জামিনও দেওয়া হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মিজানুর রহমান বলেন, হাইকোর্ট এ মামলার অভিযুক্ত ৮ আসামির কার্যক্রম স্থগিত করেছিল। ছয় জনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। বাকি দুজনেরটা দ্রুতই প্রত্যাহার হবে। এরপরই সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে বলে আশা করছি।

রানা প্লাজা ধসের পর ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ওইদিন সাভার থানায় মামলাটি করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবনের মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৬ সালের ১৪ জুন ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। অভিযোগ গঠনের ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন আসামি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন। 

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের সময় ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা ভবন। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

সর্বশেষ খবর