সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

সিলেটে করোনায় মৃত্যুর রেকর্ড সংক্রমণ আরও বাড়ার শঙ্কা

মার্চে মাসে ১৩ জন মারা গেলেও গত ২৫ দিনে প্রাণহানি ৪৭ জনের

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে এক দিনে করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে আটজন। এর আগে এক দিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল পাঁচ। মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। লকডাউনের কারণে গেল কয়েকদিনে সারা দেশে নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা কমলেও সিলেটে বেড়েই চলছে। পুরো এপ্রিল জুড়ে প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা ছিল শতাধিক। গত মার্চ মাসে করোনায় ১৩ জন মারা গেলেও চলতি মাসের ২৫ দিনে প্রাণহানি ঘটেছে ৪৭ জনের।  গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশে লকডাউন শুরু হলেও সিলেটে ছিল না স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই। শুরু থেকেই অপ্রয়োজনে বের হয়ে আসেন রাস্তায়। ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হলেও রাস্তাঘাটও হাট-বাজারে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মানুষ কেনাকাটা করেছে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ঘুরে বেড়িয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশকে সারা দিন রাস্তায় ঘাম ঝরাতে হয়েছে। তারপরও মানুষকে বোঝানো যায়নি করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা। ফলে লকডাউনের সময়ও সিলেটে করোনা সংক্রমণ কমেনি। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, এর আগে গত ১ এপ্রিল সিলেট বিভাগে এক দিনে করোনায় পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছিল। এরপর প্রায় প্রতিদিনই করোনার ছোবলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলছিল। সর্বশেষ গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আটজনের প্রাণহানি ঘটে। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এটিই ছিল সিলেট বিভাগে এক দিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড।

মারা যাওয়া এই আটজনের সবাই সিলেট জেলার বাসিন্দা। করোনা চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, ধরন পাল্টিয়ে করোনা এখন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আক্রান্তরা টের পাওয়ার আগেই রোগীর ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে ফেলছে ভাইরাস। ফলে হাসপাতালে আসার পর তাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময়ও পাওয়া যাচ্ছে না।

সিলেটের কভিড ডেডিকেটেড ‘শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল’র আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র জানান, হাসপাতালে আসা রোগীদের অনেকেরই অবস্থা খারাপ থাকে। এ ছাড়া হঠাৎ করে রোগীদের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। তখন সঙ্গে সঙ্গে আইসিইউতে নিতে হয়। আগে চিকিৎসার জন্য বেশি সময় পাওয়া যেত, এখন আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার অবনতি দ্রুত হচ্ছে। তাই মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।

সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ডা. নূরে আলম শামীম বলেন, সিলেটে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কম। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মানুষ মাস্ক ব্যবহার করলে সংক্রমণ অনেকটা কমে আসত। কিন্তু মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছে না। যারা মাস্ক পরিধান করছেন, তারাও সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন না। অনেকে পুলিশের বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়ে থুতনিতে মাস্ক আটকে রাখছেন। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা না গেলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কোনোভাবেই কমানো সম্ভব নয়। বরং ঈদকে সামনে রেখে মার্কেট খোলায় এই সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।

সর্বশেষ খবর