বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

সৌদি ফল ‘সাম্মাম’ এখন কুষ্টিয়ায়

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

সৌদি ফল ‘সাম্মাম’ এখন কুষ্টিয়ায়

সৌদি আরবের সুস্বাদু সাম্মাম ফলের চাষ হচ্ছে কুষ্টিয়ায়। এ ফলের চাষ করেছেন জেলার মিরপুর উপজেলার কচুবাড়ীয়া এলাকার কলেজছাত্র নাঈম ইসলাম। তার খেতে অপ্রচলিত এই ফলের ফলনও ভালো হয়েছে। এতে খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন নাঈম। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। করোনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কলেজ বন্ধ। বাড়িতে বসে সময় যেন কাটছিল না নাঈমের। সময় কাটানোর উপায় খুঁজতে গিয়ে কৃষির কথা মনে আসে তার। প্রবাসী বড় ভাইয়ের পরামর্শে সৌদি ফল ‘সাম্মাম’ চাষের উদ্যোগ নেন তিনি। পরে ইন্টারনেট ও কৃষি অফিসের পরামর্শে বাণিজ্যিকভাবে এ ফল চাষ শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে ৩৩ শতক জমি বর্গা নিয়ে তিনি সাম্মাম চাষ করেন। নাঈম জানান, মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে বগুড়ার একটি খামার থেকে সাম্মাম ফলের চারা সংগ্রহ করেন। তার খেতে ৩ হাজার সাম্মাম গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ২-৩টি করে ফল এসেছে। বেশি ফল রাখলে ফলন কম হয়। একেকটি ফলের ওজন হয় দেড় থেকে দুই কেজি। প্রতিটি গাছেই ফল বেশ ভালো এসেছে। এক বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকার মতো।

এ জমি থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো লাভ হতে পারে বলে আশা করছেন তিনি। নাঈমের খেতে গিয়ে দেখা যায় কুমড়ো গাছের মতো লতানো গাছ। গাছের ফাঁকে ঝুলছে দেশি বাঙ্গির মতো ফল। প্রায় প্রতিটি গাছেই ভরপুর ফল। বাঁশের মাচা আর পলিথিনের জালের ফাঁকে ফাঁকে পুরো খেত যেন ফলে ভরে রয়েছে।

নাঈম জানান, এ ফল খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ। বহির্বিশ্বে এ ফলের বেশ প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশে এটির প্রচলন এখনো কম। এ ফল সৌদিতে সাম্মামসহ বিভিন্ন দেশে ‘রক মেলন’, ‘সুুইট মেলন’, ‘মাস্ক মেলন’, ‘হানি ডিউ’ নামে পরিচিত। দুই জাতের সাম্মাম রয়েছে। একটি জাতের বাইরের অংশ সবুজ আর ভিতরের অংশ লাল, আরেকটি জাতের বাইরের অংশ হলুদ এবং ভিতরের অংশ লাল। তবে খেতে দুই ধরনের ফলই খুব মিষ্টি ও রসালো। দোয়াঁশ মাটিতে সাম্মাম চাষ করা ভালো। মাটি ভালোভাবে চাষ করে বেড এবং নালা করে, মালচিং দিয়ে এ ফলের চাষ করতে হয়। তাহলে বেশ ভালো ফলন পাওয়া যায়। এটি খুবই অল্প সময়ের ফসল। গাছ লাগানোর দেড় মাসের মধ্যেই হয় সাম্মাম ফল। যেহেতু এই ফল কাঁচা-পাকা দুই অবস্থায়ই খাওয়া যায়, এ জন্য তিনি পোকামাকড় দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে  ফেরামন ফাঁদ ব্যবহার করছেন। নতুন এই ফল এবং ফলের চাষাবাদ দেখতে অনেক মানুষ ভিড় করছেন।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশচন্দ্র ঘোষ বলেন, রক মেলন বা সাম্মাম বিদেশি ফল হলেও আমাদের  দেশে এটির চাষ করা সম্ভব। মিরপুর উপজেলার কচুবাড়ীয়া এলাকার একজন তরুণ এক বিঘা জমিতে এ বছর এ ফলের চাষ করেছে। সে খুব ভালো ফলও পাচ্ছে। পুষ্টিসমৃদ্ধ ফলমূল এবং আধুনিক চাষাবাদে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর