সোমবার, ৩ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

শেবাচিম হাসপাতালের সৌন্দর্যহানি করে ডরমেটরি ভবন, ক্ষুব্ধ সুশীলরা

রাহাত খান, বরিশাল

শেবাচিম হাসপাতালের সৌন্দর্যহানি করে ডরমেটরি ভবন, ক্ষুব্ধ সুশীলরা

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) সৌন্দর্য বিনষ্ট করে অপরিকল্পিতভাবে একটি ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ (এইচইডি)। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সুশীল সমাজ নেতারা ক্যাম্পাসের অন্যত্র ওই ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে হাসপাতালের মূল ভবনের জরুরি বিভাগের সামনে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের বিরোধিতা করে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, এই ভবন নির্মাণ হলে হাসপাতালের মূল ভবনের সৌন্দর্য ব্যাহত হবে। তবে হাসপাতাল ভবনের সামনে পাঁচ তলা ভবন নির্মাণের কারণে মূল ভবনের কোনো সৌন্দর্যহানি হবে না বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। প্রায় ৭০ একর আয়তনের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ১ হাজার শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন, একাডেমিক ভবন, ৩টি ছাত্রাবাস, ২টি ছাত্রী নিবাস, ২টি ইন্টার্ন ডক্টরস হোস্টেল, নার্সিং কলেজ, নার্সিং ছাত্রীনিবাস, নার্সিং ছাত্রাবাস, ইনস্টিটিউট অব হেল্থ টেকনোলজি (আইএইচটি) ভবন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন বর্ধিত হাসপাতাল ভবন (করোনা ওয়ার্ড), মসজিদ, জিমনেশিয়াম, খেলার মাঠ এবং ডাক্তার ও কর্মচারীদের কোয়ার্টার রয়েছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসের সব অবকাঠামো পরিকল্পিত এবং নান্দনিক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সুশীল সমাজের কোনো পরামর্শ না নিয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ মেডিকেলের মূল ভবনের জরুরি বিভাগের সামনে পাঁচ তলা পাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে।

৮৩ ফিট দৈর্ঘ্য এবং ৫৫ ফিট প্রস্থ বিশিষ্ট পাঁচ তলা ভবনে থাকছে পুরুষ ও মহিলা ডরমেটরি, পুরুষ ও মহিলা জিমনেশিয়াম, স্যুট, পার্কিং, গার্ডেনিং, ফার্মেসি এবং ফুটপাথ। এই ভবন নির্মাণে বরাদ্দ রয়েছে ৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এতে বাদ সেধেছে স্থানীয় সুশীল সমাজ। তারা হাসপাতালের মূল ভবনের সামনে অপরিকল্পিতভাবে মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

উদীচী বরিশালের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুর রহমান মিরন বলেন, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। পরিকল্পিত নকশায় এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে মেডিকেলের মূল ভবনের সৌন্দর্যহানি করে জরুরি বিভাগের সামনে পাঁচ তলা ডরমেটরি ও জিমনেশিয়াম ভবন নির্মাণ গ্রহণযোগ্য নয়।

বরিশাল ইতিহাস ঐহিত্য ও সৌন্দর্য রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে অনেক জায়গা খালি আছে। সেসব জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ না করে জরুরি বিভাগের সামনে নতুন ভবন নির্মাণ অযৌক্তিক। স্থানীয় সুশীল সমাজ মেডিকেল ভবনের সৌন্দর্যহানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে জানান তিনি।

শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ৩ বছর আগে যখন মেডিকেল ক্যাম্পাসে একটি মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয় তখন তিনি দায়িত্বে ছিলেন না। হাসপাতালের মূল ভবনের জরুরি বিভাগের সামনে নতুন একটি পাঁচ তলা ভবন নির্মিত হলে মূল ভবনের সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে। তিনি নিজেও ওই স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের বিপক্ষে বলে জানান পরিচালক।

এইচইডির সহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ৮৩ ফুট দীর্ঘ এবং ৫৫ ফিট প্রস্থ বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস ভবনটি মেডিকেলের সামনে নয়, জরুরি বিভাগের পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল ভবন এবং বান্দ রোড থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সয়েল টেস্ট, পাইল টেস্ট এবং লোড টেস্ট করা হয়েছে। এখন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল (এইচইডি) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইছাহাক মিয়া বলেন, তৎকালীন মেডিকেল কর্তৃপক্ষ যেখানে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে সেখানেই মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এখন যদি কোনো বাধা আসে তাহলে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

সর্বশেষ খবর