মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় সিল্ক ব্যবসায় ভাটা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

করোনায় সিল্ক ব্যবসায় ভাটা

একসময় রাজশাহীর সিল্কের তৈরি পোশাকের চাহিদা ছিল আকাশচুম্বী। এখন ঐতিহ্য বজায় থাকলেও ধুঁকছে রেশম শিল্প খাত। কয়েকটা উৎপাদন ও বিপণন প্রতিষ্ঠান লোকসান গুনেই ধ্বংসপ্রায় এ শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে কোনো রকমে। করোনায় সিল্ক ব্যবসায় ভাটা পড়েছে, বিক্রি নেমেছে ২৫ ভাগে, লোকসান হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। মহানগরীর সপুরা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী সপুরা সিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ ১৯৭৯ সাল থেকেই রেশমের তৈরি পোশাক উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত। নিজস্ব কারখানায় রেশমের সুতা ও সেই সুতা থেকে পোশাক তৈরি করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। লকডাউনের ঘোষণার পর তাদের কারখানা ও শোরুম বন্ধ। সীমিত পরিসরে মার্কেট চালুর ঘোষণার পর থেকেই পুরোপুরি সরকারি নিয়মনীতি মেনেই তারা তাদের শোরুম চালু করেছেন। রাজশাহী সপুরা সিল্ক ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সাজ্জাদ আলী বলেন, আগে ঈদ এলে সারা বছরের ব্যবসা হয়ে যেত। গত তিন মাসে আমার ৩ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এই লোকসান তুলতেই এক-দেড় বছর লেগে যাবে। করোনা পরিস্থিতির কখন উন্নতি হবে তার ঠিক নেই। তারপরও সরকারি সিদ্ধান্ত মেনেই কাজ করব। শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেক ক্রেতাকেই শোরুমের নিচতলায় জীবাণুনাশক দিয়ে পুরো শরীর ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে ভিতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। মেঝেতে ব্লিচিং পাউডার মেশানো পাপোশ রেখে দেওয়া হয়েছে। শোরুমে প্রবেশের সময় তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ভিতরেও দূরত্ব মেনে পণ্য কিনতে হচ্ছে। শোরুমের ম্যানেজার সাইদুর রহমান জানান, শোরুম খুললেও বেচাবিক্রি খুব কম হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির আগে, ঈদের আগে প্রতিদিন ২০-২৫ লাখ টাকা বিক্রি হতো। এখন  মাত্র পাঁচ-সাত লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাশের ভবনে আছে রাজশাহী ঊষা সিল্কের শোরুম। সেখানেও একই চিত্র। মূল ফটকে জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে জীবাণুনাশক করে তাপমাত্রা মেপে ঢুকতে হচ্ছে শোরুমে। তবে বেচাবিক্রি কম। ঊষা সিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজের জনসংযোগ কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, পয়লা বৈশাখ ও দুই ঈদকে কেন্দ্র করেই আমাদের বেচাবিক্রি বেশি হয়। করোনার কারণে পয়লা বৈশাখে তো বিক্রিই করতে পারিনি। তখন ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঈদের প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার বিক্রি হতো সেখানে ৫০ হাজার টাকাই হচ্ছে না। রাজশাহী সিল্কের অন্য শোরুমগুলোর চিত্র এমনই। লোকসানে পড়ছে সব পোশাক খাতের শোরুম। শোরুমের মালিকরা জানালেন, এই করোনায় তারা কোটি কোটি টাকা লোকসানে পড়েছেন। লকডাউনে সারা দেশে রেশম শিল্পের ক্ষতি প্রায় ২০০ কোটি টাকা। তাই এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি প্রণোদনাসহ রেশম শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, এমনিতে তো রেশম শিল্প ধ্বংসের পথে। তারপরও কোনো রকমে চলছিল এ খাত। করোনাভাইরাসের কারণে লোকসানে পড়েছে। সারা দেশে রেশম শিল্পের ক্ষতি ২০০ কোটি টাকার মতো। রেশম শিল্পের দুটি অংশ- একটি গুটি থেকে সুতা উৎপাদন, আরেকটি বস্ত্র খাত। চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় আড়াই শ তাঁতের সঙ্গে যুক্ত ১০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাঁত বন্ধ থাকায় তারা বেতনও পাননি। এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন। এ জন্য রেশম উন্নয়ন বোর্ডকে এগিয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর