শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

দরকার জনবল বৃদ্ধি ও আজীবন রেশনিং

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর

জিন্নাতুন নূর

অগ্নি-দুর্ঘটনা, লঞ্চডুবি, ভবনধস, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনায় বিপদে পড়া মানুষজনকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেন তারা। শুধু মানুষ নয়, বিপদে পড়া পশুপাখি উদ্ধার কার্যক্রমকেও সমান গুরুত্ব দেন। এরা হলেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের কর্মী বাহিনী। নিজের জীবন ঝুঁকিতে রেখে হলেও তারা দুর্ঘটনায় পড়া মানুষদের উদ্ধার করেন। ৩ এপ্রিল জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভবনের গ্রিল কেটে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানশনে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হন কয়েকজন উদ্ধারকর্মী। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও বীর এই যোদ্ধারা আগুনের তান্ডবে থেমে না গিয়ে একে একে আটকে পড়া মানুষসহ ভবনে থাকা পোষা একটি টিয়া পাখিও উদ্ধার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তবে জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশে ফায়ার সার্র্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরে কর্মরত জনবলের সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল। ১৭ কোটি মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য মাত্র ১৩ হাজার লোক ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত। কিন্তু বিদ্যমান জনবলের মধ্যে কেউ কেউ অবসরে যাচ্ছেন। এতে কিছু জায়গা খালি হলেও তা আর পূরণ হচ্ছে না। এই হিসাবে সাড়ে ১২ হাজার জনবল ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত আছেন। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মানুষকে কাক্সিক্ষত সেবা প্রদানের জন্য আজীবন রেশন পাওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন। তারা আশাবাদী- সরকার এ দাবি শিগগিরই পূরণ করবে। দেশের বড় বড় অগ্নি-দুর্ঘটনা, যেমন নিমতলী, তাজরীন, বনানীর এফআর টাওয়ারসহ গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতাল অগ্নিকান্ডে বিপদে পড়া মানুষদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা নিহত ও আহত হন। গত বছর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ১৫ জন আহত হন। এর মধ্যে বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকান্ডে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফায়ারম্যান মো. সোহেল রানা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা জনবল বৃদ্ধির জন্য এরই মধ্যে ইউএনডিপির সহায়তায় একটি অর্গানোগ্রাম তৈরি করেছি।

এটি এপ্রিলের ২ তারিখে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন জনবলের অভাবে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এই বাহিনী কাক্সিক্ষত সেবা মানুষকে দিতে পারছে না। তিনি বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ জন্য টেন্ডারের কাজ চলছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে কিছুদিন আগে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের জন্য কিছু যন্ত্রপাতি ক্রয়ে বাজেট বরাদ্দ আছে। আশা করা হচ্ছে এ বরাদ্দ থেকে কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা যাবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের আজীবন রেশন ব্যবস্থা চালু করা উচিত। এরই মধ্যে সরকারের কাছে এ জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি এটি হয়ে যাবে। এ ছাড়া দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একটি প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রয়োজন। এ জন্য মুন্সীগঞ্জে ১০০ একর জমিতে একটি প্রশিক্ষণ একাডেমি তৈরি করা হচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য আধুনিক উদ্ধার সরঞ্জামাদি ক্রয় করে। আধুনিক যন্ত্রপাতির মধ্যে ফায়ার সার্ভিসে আছে টার্নটেবিল ল্যাডার, যা উঁচুতলার আগুন নেভাতে সাহায্য করে। আরেকটি আছে এবিএল প্ল্যাটফরম। এই দুটি যন্ত্র ফায়ার সার্ভিসে ২৫-২৬টি আছে। এ ছাড়া উদ্ধারকাজে উঁচু স্থানে কেউ আটকে থাকলে এখন ক্যামেরাযুক্ত ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে লোকজনকে উদ্ধার করা হয়। সবাইকে অ্যাম্বুুলেন্স সুবিধা দেওয়ার জন্যও প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর