রবিবার, ৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

উপকূলের তিন জেলায় বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে অনিয়ম

বালু দিয়ে বেড়িবাঁধ, সৈকতের বালু দিয়ে সিসি ব্লক নির্মাণের অভিযোগ

রাহাত খান, বরিশাল

প্রকৃতি লন্ডভন্ড করে দেওয়া প্রবল ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানি থেকে উপকূলীয় লাখ লাখ মানুষের জানমাল সুরক্ষায় দক্ষিণের তিন জেলায় প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। নতুন বাঁধ নির্মাণ, বাঁধ মেরামত, বাঁধের স্লোপ প্রটেকশন, খাল খনন, স্লুইস নির্মাণ ও মেরামতের কাজ বাস্তবায়ন করছে একটি বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ এবং সমুদ্রতীরের বালু দিয়ে সিসি ব্লক তৈরির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানি থেকে উপকূলীয় তিন জেলার মানুষের জানমাল রক্ষায় বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের (আইডিএ ক্রেডিট নম্বর ৬২৮০ বিডি) আওতায় ১ হাজার ৮৯ কোটি টাকার কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের জুলাইয়ে। সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা, কলাপাড়ার ডালবুগঞ্জ, গলাচিপা, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা ও ভান্ডারিয়ায় ৫৯.২৫ কিলোমিটার নতুন বাঁধ নির্মাণ, ১৪৯.৪৬ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত, ৯.৩৬ কিলোমিটার বাঁধ স্লোপ প্রটেকশন, ১৫৪.৬৪ কিলোমিটার খাল খনন, ৫১টি নতুন স্লুইস নির্মাণ, ৬টি স্লুইস মেরামত, ৫১টি ইনলেট (ছোট স্লুইস) নির্মাণ ও ৩০টি ইনলেট মেরামতের কাজ বাস্তবায়ন করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চংকিং ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিআইসিও)। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের জানুয়ারিতে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এপ্রিল পর্যন্ত সমাপ্ত হয়েছে মাত্র ৬২ ভাগ।

এদিকে এঁটেল মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কথা থাকলেও এ প্রকল্পের কলাপাড়ার ডালবুগঞ্জ, রমজানপুর ও পেয়ারপুর, বরগুনা সদর ও ভান্ডারিয়ায় বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, সমুদ্রতীরে সিসি ব্লক নির্মাণ হচ্ছে সৈকতের বালু দিয়েই।

ডালবুগঞ্জের বাসিন্দা মোকলেছ হাওলাদার বলেন, ‘ভেকু মেশিন দিয়ে বেড কেটে সেই বেডে ড্রেজিং পাইপের মাধ্যমে বালু ফেলে তার ওপর মাটির আস্তর দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বাঁধ।’

কুয়াকাটা সৈকতে প্রকাশ্যেই সৈকতের বালু দিয়ে সিসি ব্লক নির্মাণের অভিযোগ করেছেন চংকিং ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে জড়িত একাধিক স্থানীয় শ্রমিক।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিদেশি অর্থায়নে উপকূলবাসীকে রক্ষায় এঁটেল মাটি দিয়ে শক্তভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কথা। না হলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জানমালের হানি করবে। এতে মানুষ প্রকল্পের সুবিধাবঞ্চিত হবে।’

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব শরীফ বলেন, ‘বেড়িবাঁধ নির্মাণে শুভঙ্করের ফাঁকি চলছে। এঁটেল মাটি না পাওয়ার অজুহাতে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। অথচ আশপাশে এঁটেল মাটির অভাব নেই।’ প্রকল্পের সুবিধা পেতে গুণগতমান বজায় রেখে কাজ সম্পন্ন করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চল জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের আওতায় উপকূলের তিন জেলায় উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। কাজের গুণগতমান বজায় রাখতে পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) নিয়োগ করা আছে। এ কাজ দেখভালে স্থানীয় পাউবোর কোনো কর্তৃত্ব নেই।’

এঁটেল মাটি সংকটের কথা বলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বালু দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণের অভিযোগ শুনেছেন বলে জানান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপি। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয় থেকে সরেজমিন বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর কথা বলেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর