রবিবার, ৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা
মালিক-শ্রমিকদের সংবাদ সম্মেলন

দূরপাল্লার গণপরিবহন চালু ও ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার গণপরিবহন খুলে দেওয়া এবং ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনাসহ পাঁচটি দাবি জানিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের তিন সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গতকাল যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরে। দাবিগুলো পূরণ না হলে ঈদের দিন সারা দেশের মালিক ও শ্রমিকরা নিজ নিজ এলাকায় বাস ও ট্রাক টার্মিনালে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। তাদের দাবিগুলো হলো- স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার পরিবহনসহ সব গণপরিবহন এবং স্বাভাবিক মালামাল নিয়ে পণ্য পরিবহন চলাচলের সুযোগ দিতে হবে; লকডাউনের কারণে কর্মহীন সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের ঈদের আগে আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে হবে; লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মালিকদের যানবাহন মেরামত, কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও ঈদ বোনাস ইত্যাদি দেওয়ার জন্য নামমাত্র সুদে ও সহজ শর্তে ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিতে হবে ইত্যাদি।

 সারা দেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোয় পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে ঈদের আগে ও পরে ১০ টাকায় ওএমএসের চাল বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে; গণপরিবহন ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগের বিপরীতে সমস্ত ব্যাংক ঋণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদ মওকুফ ও ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তি স্থগিত এবং ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ক্লাসিফায়েড ঋণ আনক্লাসিফায়েড করতে হবে; লকডাউনে বন্ধ থাকা গাড়ির ট্যাক্স-টোকেন, রুট পারমিট ফি, আয়করসহ সব ফি, কর ও জরিমানা মওকুফ করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাগজপত্র হালনাগাদ করার সুযোগ দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান এমপি।

বক্তব্যে বলা হয়, ‘৬ মে থেকে লকডাউন শিথিল করে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রেখে মহানগর ও জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন পরিচালনার জন্য যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। করোনা থেকে জীবন রক্ষার জন্য সরকার লকডাউন ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। আমরা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা লকডাউনের বিরোধী নই। আমরাও চাই মানুষের জীবন রক্ষায় কঠোরভাবে লকডাউন পালিত হোক। লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকার কথা। এর পরও মিছিল-মিটিং সমাবেশ হচ্ছে, গার্মেন্ট কারখানা চলছে, শপিং মল, কাঁচাবাজার চলছে, দোকানপাট, হাটবাজার খোলা, অফিস-আদালত আংশিক খোলা। গণপরিবহন বাস-কোচ, মিনিবাস বন্ধ থাকলেও রিকশাভ্যান, নছিমন, করিমন, মোটরসাইকেল, বেবিট্যাক্সি, ইজিবাইক, কার, মাইক্রোবাস, হিউম্যান হলার, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াও ছোট ছোট ট্রাক ও পিকআপ গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে শতভাগ। সবকিছু খোলা রেখে শুধু দূরপাল্লার বাস-কোচ বন্ধ রেখে কতটা সংক্রমণ রোধ করা যাবে আমাদের বিবেচনায় তা আসে না।’

শুধু দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ রেখে করোনা সংক্রমণ কমানোর উদ্দেশ্য সফল হবে না বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের আনন্দ শ্রমিকদের জীবনে নিরানন্দ বয়ে এনেছে। সন্তানদের একটু সেমাই, এক টুকরো মাংস দিতে পারবেন না- এ যন্ত্রণা কোনো শ্রমিক পিতা সহ্য করতে পারেন না। সড়ক পরিবহন মালিকদের অবস্থাও ভালো নয়। দেশে ৩ লাখের বেশি মালিক, যার অধিকংশই অল্প পুঁজির। গাড়ি চালাতে না পেরে তারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এতে সুদ বাড়ছে। সরকারি ট্যাক্স-ফি ইত্যাদি দিতে পারছেন না। সুদের বোঝা বৃদ্ধি পাওয়ায় লিজিং কোম্পানি বহু গাড়ি বাজেয়াপ্ত করছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক মো. আবু রায়হান প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর