মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা
বন্ধ হয়ে গেছে ১৫০ মিল

রাজশাহীতে ডাল ব্যবসায়ীদের দুর্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে ডাল ব্যবসায়ীদের দুর্দিন

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আর বাইরে থেকে ডাল আমদানির কারণে রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের দুর্দিন চলছে। টানা লোকসানে অনেকে মিল বন্ধ করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে অন্তত ১৫০টি মিল বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ডাল ভাঙালেও মিল থেকে বিক্রি হচ্ছে না। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ও বেলপুকুর এলাকায় এক-দেড় বছর আগেও অন্তত ২৫০টি ডাল মিল চলত। এখন সেই সংখ্যা ১০০ তে নেমে এসেছে। রমজান মাসে সাধারণত মসুর ডালের চাহিদা বাড়লেও এবার চিত্র ছিল ভিন্ন। মিলারদের লাখ লাখ টাকার ডাল পড়ে আছে গুদামে। বিক্রি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি ডালের চাহিদা কমে গেছে। বানেশ্বর এলাকার ভাই ভাই ডাউল মিলের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, রমজান মাসে ভর্তার জন্য মসুর ডালের চাহিদা বেড়ে যায়। সে অনুযায়ী তাঁরা অতিরিক্ত ডাল কিনে মিলে প্রক্রিয়াজাত করে রাখেন। কিন্তু এবার রমজানে মসুর ডালের চাহিদা ছিল না বললেই চলে। তিনি বলেন, মানুষ এখন আমদানি করা মোটা মসুর ডাল খাচ্ছেন। সেটা কম দামে পাওয়া যায়। ফলে দেশি চিকন মসুর ডালের চাহিদা কমে গেছে। এতে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার লকডাউন দেওয়ার পর ব্যবসা একেবারেই থেমে গেছে। মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে না বলে চাষিদের কাছ থেকে কিনছিও না। তবে এখন মুগ ডাল উঠছে। অল্প করে কিনছি। বিক্রি না হলে তো লোকসান হবে। আমাদের বানেশ্বর এলাকায় কমপক্ষে ২৫০টি ডাল মিল চলত। করোনার মধ্যে ১৫০টির মতো বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলো অল্প করে ডাল ভাঙাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি মসুর, ছোলা, মাসকলাই এবং খেসারি ডালের ব্যবসা খারাপ হয়ে পড়ায় বানেশ্বরের অনেক ব্যবসায়ীও আমদানির দিকে নজর দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার নিম্নমানের ডাল এনে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করছেন। মিলগুলোতে ভেজাল মুগ ডাল হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা অবশ্য এ অভিযোগ স্বীকার করেননি। তবে দু-একজন স্থানীয় ডালের ব্যবসা ছেড়ে আমদানির দিকে ঝুঁকছেন বলে তারা স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলছেন, সবকিছুই টিকে থাকার জন্য। বাধ্য হয়ে তাঁরাও ডাল আমদানি করছেন। তবে এখনো বানেশ্বরের বেশির ভাগ মিল মালিক বানেশ্বর বাজারে চাষিদের ডাল কিনে থাকেন। সেই ডাল রোদে শুকানোর পর নিজেদের মিলে ভাঙান। প্রক্রিয়াজাতের পর এসব মিল থেকে ডাল যায় ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য প্রান্তে। বর্তমানে ডালের দাম নিয়ে চাষিদেরও পোষাচ্ছে না, মিলারদেরও পোষাচ্ছে না। ফলে ডাল নিয়ে সবাই বেকায়দায় পড়ছেন। আগে পরিস্থিতি এত খারাপ ছিল না। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পুঠিয়ার বেলঘরিয়া এলাকার শাহীন ডাল মিলের মালিক শাহীন আলম বলেন, ‘আমরা খুব খারাপ আছি। আমাদের খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। করোনা আমাদের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছে। এ ক্ষতি কতদিনে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে জানি না।’ ডাল মিলের আরেক মালিক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘গুদামে ২০ লাখ টাকার ডাল পড়ে আছে। কেনার মানুষ নেই। ডালে পোকা ধরছে, শুটি ধরছে। দুই দিন পর পর বের করে রোদে শুকাতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এত খারাপ যে, ডাল বের করে রোদ দেওয়ার শ্রমিকের মজুরিই দিতে পারছি না।’ বানেশ্বর ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী বলেন, ‘দেশি ডালের বাজার নিশ্চিত করতে হলে কম দামে বিদেশি মোটা ডাল আমদানি বন্ধ করতে হবে। অন্তত দেশি ডাল যতদিন থাকে, ততদিন বাইরে থেকে যেন ডাল আমদানি করা না হয়। শুধু এটা নিশ্চিত করা হলেই ডাল ব্যবসায়ী-চাষিরা উপকৃত হবেন। তা না হলে করোনা কেটে গেলেও আমাদের দুর্দশা কাটবে না।’

তিনি বলেন, ‘এ করোনার মধ্যে আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক মিল বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার আমাদের যদি প্রণোদনা দিত, তাহলে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর