বুধবার, ১৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

শহরজুড়ে কভিড বর্জ্য বাড়াচ্ছে ঝুঁকি

ফ্ল্যাটে ঘরবন্দী কভিড আক্রান্তদের ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্রের ঠিকানাও হচ্ছে একই ডাস্টবিন

শামীম আহমেদ

শহরজুড়ে কভিড বর্জ্য বাড়াচ্ছে ঝুঁকি

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এভাবেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে করোনার বর্জ্য -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চলতি পথে মাস্কের ফিতাটি ছিঁড়ে গেলে তা ছুড়ে ফেলছেন সড়কে। মাস্ক বদলানোর সময়ও পুরনোটির জায়গা হচ্ছে রাস্তায়। আবার সারা দিন বাইরে মাস্ক পরে ঘুরে ঘরে ফিরেই হ্যাঁচকা টানে সেটি খুলে ছুড়ে দিচ্ছেন ময়লার ঝুড়িতে। পরদিন সেই মাস্ক চলে যাচ্ছে ডাস্টবিন বা সড়কে। ফ্ল্যাটে ঘরবন্দী কভিড আক্রান্তদের ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্রের ঠিকানাও হচ্ছে একই ডাস্টবিন। কখনো ডাস্টবিন থেকে সেগুলো সড়কে টেনে আনছে পথের কুকুর। এসব বর্জ্য হাতড়ে প্লাস্টিক বোতলসহ বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করছে পথশিশুরা। কভিডের বিভিন্ন সুরক্ষাসামগ্রীর এমন অব্যবস্থাপনা ও অসচেতন ব্যবহার বাড়িয়ে দিচ্ছে সংক্রমণের ঝুঁকি। এতে ভাইরাসটির লাগাম টানার পথ দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীর যে কোনো এলাকায় কিছুটা পথ হাঁটলেই দেখা যায় রাস্তায় যত্রতত্র পড়ে আছে অসংখ্য ব্যবহৃত মাস্ক। কখনো পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে গ্লাভস। ঘরে চিকিৎসাধীন কভিড আক্রান্তের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসও সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে পলিথিনে ভরে ফেলা হচ্ছে নিকটস্থ ডাস্টবিনে বা তুলে দেওয়া হচ্ছে ময়লার গাড়িতে। সুস্থ হওয়া কয়েকজন কভিড আক্রান্তের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতাল বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা হলেও বাসাবাড়ির কভিড বর্জ্যরে জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। আর ৯০ ভাগের বেশি আক্রান্ত বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাই বাসাবাড়িতেই তৈরি হচ্ছে সর্বাধিক কভিড বর্জ্য, যা অব্যবস্থাপনার কারণে ছড়িয়ে পড়ছে রাস্তাঘাটে, ডাস্টবিনে। অন্যদিকে কভিড বর্জ্য আলাদা করা সম্ভব না হওয়ায় ও সিটি করপোরেশনের বর্জ্য পোড়ানোর ব্যবস্থা না থাকায় সব বর্জ্য একসঙ্গেই ডাম্পিং এলাকার খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে। আর এসব বর্জ্যে ঘাপটি মেরে থাকা জীবাণু নীরবে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাসাবাড়ি থেকে কভিড বর্জ্য আলাদাভাবে সংগ্রহ করে ধ্বংস করার কথা। তা না করলে যারা বর্জ্য সংগ্রহ করেন তারা সংক্রমিত হবেন। তারা আবার অন্যদের সংক্রমিত করবেন। মানুষের মধ্যেও সচেতনতার দরকার আছে। ব্যবহারের পর যেখানে সেখানে মাস্ক বা অন্যান্য কভিড বর্জ্য ফেলে দেওয়া মানে ভাইরাসটি ছড়াতে সাহায্য করা। ওই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও সেই ঝুঁকি থেকে বাইরে নন। অবশ্যই ব্যবহৃত সুরক্ষাসামগ্রী ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। অথবা পলিথিনে ভরে ডাস্টবিনে ফেলবেন। যারা বর্জ্য সংগ্রহ করেন তাদের বিশেষ পোশাক, গ্লাভস, মাস্ক দিতে হবে। সেটাও তো দেখছি না। কভিড বর্জ্য যেভাবে যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ছে তাতে শঙ্কা বাড়ছে। সবাই মিলে সচেতন আচরণের মাধ্যমেই ভাইরাসটিকে দূর করতে হবে। না হলে বছরের পর বছর এ সংকট বয়ে বেড়াতে হবে।’ ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহকারী রেজাউল বলেন, ‘বর্জ্যরে সঙ্গে মাস্ক, সিরিঞ্জ, গ্লাভস সবই থাকে। কেউ আলাদাভাবে দেয় না। আলাদাভাবে সংগ্রহের কোনো বিষয়ও আমাদের জানা নেই। একসঙ্গেই এগুলো বড় ডাস্টবিনে (এসটিএস) নিয়ে যাই। সেখান থেকে ট্রাকে করে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়।’ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার গত বছরের ৩০ মে ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে। স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যবহার করছেন পিপিই। ব্যবহারের পর এসব কভিড বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ও পরিবেশ অধিদফতর নির্দেশিকা ও গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলেও তা মানা হচ্ছে না কোথাও। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের গত বছরের এক গবেষণায় দেখা যায়, করোনাভাইরাসের সুরক্ষাসামগ্রী থেকে প্রতিদিন ২৮২ দশমিক ৪৫ টন বর্জ্য তৈরি হয়। এসব বর্জ্যরে মাত্র ৬ দশমিক ৬ ভাগের সঠিক ব্যবস্থাপনা হয়। বাকি ৯৩ ভাগই আমাদের আশপাশে যত্রতত্র পড়ে থাকছে!

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর