শিরোনাম
সোমবার, ২৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বৃক্ষপ্রেমী প্রবাসীর কৃষি খামার

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বৃক্ষপ্রেমী প্রবাসীর কৃষি খামার

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট। এখানকার মানুষের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় রয়েছে প্রবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একসময় সিলেটের প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের বড় অংশ ব্যয় হতো তাদের আভিজাত্য রক্ষা আর শখ পূরণে। নিছক শখের বসে তারা কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করতেন প্রাসাদসম বাড়ি। তবে অনুৎপাদনশীল খাতে এখন আর বিনিয়োগে আগ্রহ নেই প্রবাসীদের। কষ্টের উপার্জনকে কাজে লাগাতে চান তারা। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি তারা ঝুঁকছেন কৃষিতে। এ রকম এক প্রবাসী সৈয়দ রাকিব হায়দার রুহেল। বৃক্ষপ্রেমী রুহেলের শতবিঘার কৃষি খামার এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে আরও অনেক প্রবাসীকে। উদ্বুদ্ধ করছে কৃষিতে বিনিয়োগে। যুক্তরাজ্য প্রবাসী রুহেল তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সিলাম মোহাম্মদপুরে গড়ে তুলেছেন বিশাল কৃষি খামার। সমতল, নিচু আর টিলাভূমির সমন্বয়ে প্রায় ১০০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা খামারের নাম দিয়েছেন ‘হাই ল্যান্ড এগ্রি ফার্ম’।

খামারে রয়েছে কয়েক শ লিচু গাছ। সারি সারি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে রসে টইটম্বুর পাকা লিচু। লিচুর ভারে নুয়ে পড়ছে গাছ। সিলেটের মাটি লিচু চাষের জন্য খুব বেশি উপযোগী নয়। এরপরও অনেকে শখের বশে চাষ করেন। কেউ লাভবান হন, কেউ হন হতাশ। সৈয়দ রুহেলও শুরুতে শখ করেই লাগিয়েছিলেন লিচু। মমতার পরশে লাগানো লিচু গাছগুলো হতাশ করেনি তাকে। কলম চারা লাগানোর পরের বছর থেকেই আসতে শুরু করে ফল। রসালো ও মিষ্টি হওয়ায় ইতিমধ্যে ‘হাই ল্যান্ড এগ্রি ফার্মে’র লিচুর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশ এলাকায়। তাই লিচু পাকার পরই ক্রেতারা ভিড় করেন বাগানে।

লিচু ছাড়াও খামারের টিলাভূমির ওপর লাগানো হয়েছে আম, কাঁঠাল, কমলা, মাল্টা, জলপাই ও কামরাঙাসহ নানা জাতের ফল। লেবু জাতীয় নানা ফলও রয়েছে। ফলের গাছ ছাড়াও কৃষি খামারে রয়েছে লক্ষাধিক কাঠের গাছ। কৃষি খামারটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ আগর বাগান। বাগানে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে প্রায় ৮০০ আগর গাছ। প্রায় দুই দশক আগে লাগানো আগর গাছ এখন পুরোদমে পোক্ত। গাছের মধ্যে পেরেক ঠুকে দিলেই কয়েক মাসের মধ্যে আগর সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে- এমনটা জানালেন  সৈয়দ রুহেল।

শত বিঘার কৃষি খামারটির দুই পাশে রয়েছে প্রাকৃতিক লেক। আর বাকি দুই পাশে মাটি কেটে কৃত্রিম লেক তৈরি করছেন খামার মালিক। চারপাশে লেক, মাঝখানে টিলা। টিলাজুড়ে নানা জাতের গাছ-গাছালি। মনোরম এই সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে সৈয়দ রাকিব খামারে গড়ে তুলতে চান ইকো রিসোর্ট। যেটি হবে দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র। কোলাহলমুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে অবকাশ যাপনে এখানে আসবেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা- এমন স্বপ্ন দেখছেন প্রবাসী এই উদ্যোক্তা।

১৯৯০ সালে সৈয়দ রুহেলের বাবা যুক্তরাজ্য প্রবাসী সৈয়দ ইলিয়াছ আলী শুরু করেছিলেন এই খামার গড়ার কাজ। বাবার মতো বৃক্ষ আর প্রকৃতিপ্রেমী রাকিব এখন চালিয়ে যাচ্ছেন বাবার অসমাপ্ত খামার সমাপ্ত করার কাজ। কৃষিতে তার সফলতা দেখে অনেক প্রবাসীই এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানালেন সৈয়দ রুহেল।

সর্বশেষ খবর