মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

জোরদার হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে সারা দেশের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। আবাসিক হল খুলে দেওয়া, আটকে থাকা পরীক্ষা সম্পন্ন করে সেশনজট নিরসনের দাবি এই শিক্ষার্থীদের। এ দাবিতে গতকাল রাজধানীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা শহরে মানববন্ধন করেছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে শিগগিরই সিদ্ধান্ত না এলে তীব্র আন্দোলন করবেন বলে গতকাল হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই আন্দোলনকারীরা।

গত বছরের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর এক বছর দুই মাস পার হলেও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। করোনার সংক্রমণ বন্ধ না হওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের টিকার আওতায় আনতে না পারার কারণে কবে খুলবে বিশ্ববিদ্যালয় এটিও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ সম্প্রতি এ প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের সমস্যার বিষয়টি আমরা অবগত। আমরা ভেবেছিলাম ছাত্র-ছাত্রীদের টিকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেব। কিন্তু টিকা নিয়ে সন্তোষজনক কোনো পর্যায়ে যেতে পারিনি আমরা। আমরা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার জন্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা মানববন্ধন করেন।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, জেলা প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিরা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল একই দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।

সিলেটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে, রংপুরে প্রেস ক্লাবের সামনেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-ছাত্রীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াসহ ৭ দফা দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল নগরীর শিববাড়ি মোড়ে এই মানববন্ধনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বিএল কলেজ, বয়রা সরকারি মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আর না বাড়িয়ে দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম চালুর দাবিতে বগুড়ায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

গত বছর করোনার সংক্রমণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষাও নেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বন্ধ হয়ে যায় সব পরীক্ষা। শুরু হয় সেশনজট। করোনার কারণে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কমপক্ষে এক বছরের সেশনজট বিরাজ করছে। গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরুর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস জোরেশোরে শুরু হলেও বর্তমানে এই ক্লাসে ভাটা পড়েছে। অল্প কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পাঠদান চালু থাকলেও সেগুলোতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ নেই।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে গতকালের মানববন্ধনে শাবিপ্রবির তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা ফাইজা মুস্তারী বলেন, আমাদের অনলাইনে দুটি সেমিস্টার শেষ হয়েছে। কিন্তু কোনো পরীক্ষা হয়নি। এতে দুটি সেমিস্টারের পড়া একসঙ্গে চালানো অসম্ভব এবং কষ্টদায়ক। অবিলম্বে স্বশরীরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া হোক। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন থেকে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত শাওন বলেন, চলমান লকডাউন শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত হয়েছে। এ লকডাউন শিক্ষাব্যবস্থাকে ডাউন করে দিয়েছে। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, শিক্ষাজীবন থেকে আমরা ইতিমধ্যেই দেড় বছর হারিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আলামিন মানববন্ধনে বলেন, দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই সময় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। এরমধ্যে অনলাইন ক্লাসের নামে শিক্ষকরা প্রহসন করেছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। গণিত বিভাগের জিয়াউল হক জিহাদ বলেন, শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসরুমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা এখন সময়ের দাবি। রংপুরে প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, সবকিছু খোলা রেখে শুধু প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে করোনা মোকাবিলা হাস্যকর। বিশ্বের কোথাও এতদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নেই।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সমর্থন করি। কিন্তু এতে ছাত্র-ছাত্রীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যবস্থাও আমাদের নিতে হবে। পরীক্ষা নিতে না পারলে অনলাইন ক্লাস আর কতদিন করবে শিক্ষার্থীরা? পরীক্ষা শুরু করা না গেলে অনলাইন ক্লাস মুখ থুবড়ে পড়বে। তিনি বলেন, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্রুত ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় এনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যায়, তবে এটি হবে সব থেকে উত্তম। এটি করতে না পারলে বিকল্প উপায়ও খুঁজতে হবে। কারণ, শিক্ষার্থীদের এতদিন বাড়িতে বসিয়ে রাখা যাবে না। শিক্ষার্থীদের জীবনও বাঁচাতে হবে, জীবিকার তাগিদে অন্য উপায়ও আমাদের দেখতে হবে। যেসব তরুণ-তরুণী শেষ বর্ষে বা শেষ সেমিস্টারে রয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের অপেক্ষায় যারা রয়েছেন তাদের জন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আসা উচিত। করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ২৯ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত কয়েক কোটি শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সরাসরি ক্লাস থেকে বিরত রয়েছে।

এদিকে গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির ব্যাপারে কাল বুধবার দুপুরে ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্স করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

সর্বশেষ খবর