বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ধনীদের সম্পদে বাড়ছে সারচার্জ

বাতিল হচ্ছে ন্যূনতম সারচার্জ পদ্ধতি। যার সম্পদ যত বেশি তিনি তত বেশি সারচার্জ দেবেন

মানিক মুনতাসির

ধনীদের সম্পদে বাড়ছে সারচার্জ

করোনাভাইরাস মহামারীতে বেশির ভাগ মানুষের আয় কমেছে। ব্যবসা বাণিজ্যেও নেমে এসেছে স্থবিরতা। এর ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ঘাটতি। আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মোট জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এই ঘাটতির পরিমাণ সহনীয় রাখতে ও রাজস্ব আয় বাড়াতে অতি ধনীদের সম্পদের ওপর সারচার্জ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার।  অর্থবিভাগ ও এনবিআর মনে করে সাধারণ মানুষের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা না চাপিয়ে কর প্রদানে সক্ষমদের করের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি অতি সম্পদশালীদের সম্পদের ওপর অতিরিক্ত সারচার্জ আরোপ করে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অর্থবিভাগ ও এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।  সূত্র জানায়, সাধারণ মানুষকে কষ্ট না দিয়ে সম্পদশালীদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে কর আদায়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। যার সম্পদ যত বেশি তিনি তত বেশি সারচার্জ দেবেন। এ জন্য আগামী বাজেটে সারচার্জের নতুন স্তর তৈরি করতে যাচ্ছে সরকার। বাজেট ঘাটতি পূরণে ও সরকারের রাজস্ব আায় বাড়াতে এ উদ্যোগ।  সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে সারচার্জের স্তর পাঁচটিতে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে ন্যূনতম সারচার্জ প্রথা তুলে দেওয়া হচ্ছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদের সারচার্জ দিতে হবে না। ৩ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ, ১০ কোটি থেকে ২০ কোটি পর্যন্ত ২০ শতাংশ, ২০ কোটি থেকে ৫০ কোটি পর্যন্ত ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদশালীদের আয়করের ওপর ৩৫ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে। সারচার্জ আদায়ের এমন পরিকল্পনা করে বাজেটে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে শেষ মুহুর্তে এসব পরিকল্পনায় পরিবর্তনও আসতে পারে।  জানা গেছে, বর্তমানে সারচার্জের সাতটি স্তর। এক্ষেত্রে নিট সম্পদের মূল্যমান ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে সারচার্জ দিতে হয় না। সম্পদের মূল্যমান ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা হলে বা একাধিক মোটরগাড়ি থাকলে বা যে কোনো সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮ হাজার বর্গফুটের বেশি গৃহসম্পত্তি থাকলে ১০ শতাংশ কর বা ৩ হাজার টাকা ন্যূনতম সারচার্জ দিতে হয়। সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি পর্যন্ত ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার টাকা, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটি পর্যন্ত ২৫ শতাংশ এবং ২০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষেত্রে সম্পদের দশমিক ১ শতাংশ অথবা আয়করের ৩০ শতাংশের বেশি যেটি হয় সেই হিসাবে সারচার্জ দিতে হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা, পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে মানুষের আয় কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ের ওপর। অতি সম্পদশালীদের সম্পদে বেশি করে সারচার্জ বসিয়ে রাজস্ব আদায়ের যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে সেটা রাজস্বের পরিমাণ বাড়াবে। তবে করকাঠামোর ক্ষেত্রে আমাদের একটা স্থায়ী নীতি থাকা বাঞ্চনীয়। এদিকে সম্পদশালী সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার (মালিক) আমানতকারী হিসাবের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৩ হাজার ৮৭৫টি। ৫ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির মধ্যে ১০ হাজার ৪৭২টি ব্যাংক হিসাবে রয়েছে। আর ১০ কোটি ১ টাকা থেকে ১৫ কোটির মধ্যে ৩ হাজার ৫০৭টি হিসাব রয়েছে ব্যাংকগুলোতে।

 ১৫ কোটি ১ টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৬৩২টি হিসাব, ২০ কোটি ১ টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ১ হাজার ১৩৩টি হিসাব, ২৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৩০ কোটি টাকার মধ্যে ৭২৫টি হিসাব, ৩০ কোটি ১ টাকা থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৩৮৪টি হিসাব এবং ৩৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৪০ কোটি টাকার মধ্যে ২৯৪টি (মালিক) আমানতকারীর হিসাব রয়েছে ব্যাংক খাতে।

এ ছাড়া ৪০ কোটি ১ টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার মধ্যে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা রয়েছে ৪৭৮টি। আলোচ্য সময়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৩৯০টিতে দাঁড়িয়েছে, ২০১৯ সালে যা ছিল ১ হাজার ২৮৩টি। অর্থাৎ এক বছরে ৫০ কোটি টাকার বেশি হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ১০৭টি। অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার মধ্যে মানুষের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। এ জন্যই বেশি সম্পদশালীদের সম্পদের ওপর সারচার্জ বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর