বুধবার, ২ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

১৭ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট অর্থনীতি সমিতির

১৬ লাখ ৩ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা আয়ের পথ দেখালেন ড. আবুল বারকাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭১৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব দিয়েছে দেশের অর্থনীতিবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এ বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করে সংগঠনটির সভাপতি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন, ‘আমরা মনে করি বাজেট হবে সম্প্রসারণমূলক। আমরা ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭১৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছি, যা সরকারের বর্তমান বাজেটের তুলনায় ৩ দশমিক শূন্য ৬ গুণ বেশি। আমাদের এ বিকল্প বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ৩ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বাজেটের ৯২ দশমিক ২০ শতাংশ জোগান দেবে রাজস্ব খাত। এর মধ্যে ৭৯ শতাংশ হবে প্রত্যক্ষ কর। বাকি ২১ শতাংশ হবে পরোক্ষ কর।’ গতকাল অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতি সমিতির এ বিকল্প বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।

 

 ‘কভিড-১৯ ও আর্থসামাজিক মন্দা থেকে উত্তরণে বিকল্প বাজেট : ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাব’ শিরোনামে এ সংবাদ সম্মেলনে খ্যাতনামা এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিকল্প বাজেটের ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে আমরা ব্যাংক ঋণ নেব না। কোনো বৈদেশিক ঋণও নেব না। কারণ ব্যাংকের ঋণ সরকারের জন্য নয়। ঘাটতি পূরণ হবে বন্ড বাজার, সঞ্চয়পত্র ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি থেকে। এর মধ্যে বন্ড বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা আনা সম্ভব। যা ঘাটতির ৫১ দশমিক ৯০ শতাংশ পূরণ করতে পারে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে।’ আর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি। এ সময় অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ২০১৫ সাল থেকে এ বিকল্প বাজেট দিয়ে আসছি, এটা আমাদের সপ্তম বাজেট। আশা করি সরকার আমাদের এ বাজেট প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখবে।’

বিকল্প বাজেট উপস্থাপনের সময় আবুল বারকাত বলেন, কভিড-১৯ বাংলাদেশকে উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশ এবং বিপজ্জনক আয়বৈষম্যের দেশে রূপান্তর করে ছেড়েছে। এ সময় তিনি বলেন, ‘১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত মোট পুঞ্জীভূত কালো টাকার পরিমাণ হবে আনুমানিক ৮৮ লাখ ৬১ হাজার ৪৩৭ কোটি। একই সময়ে পাচার করা টাকার পরিমাণ হবে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৭ কোটি। এখান থেকে সম্পদ কর ৫০ লাখ কোটি টাকা আহরণ সম্ভব। আর এক বছরে বিকল্প বাজেটের জন্য কমপক্ষে ১ লাখ কোটি টাকা আহরণ সম্ভব।’

অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত রাজস্ব আয় বাড়ানোর নতুন ২৮টি উপায় দেখিয়েছেন। তিনি প্রস্তাবে বলেছেন, চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মোট রাজস্ব ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৩ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরে এ আয় ৩ দশমিক ৩ গুণ বেশি বৃদ্ধি করে ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা প্রস্তাব করেছে। সুযোগ থাকার পরও সরকার নজর না দেওয়া তিনটি খাত অতিরিক্ত মুনাফা, কালো টাকা ও অর্থ পাচার থেকে সমিতি সবচেয়ে বেশি আয় (৪ লাখ ৪৩ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা) দেখিয়েছে।

আবুল বারকাত তাঁর বিকল্প বাজেটে ধনীদের ওপর অধিক কর আরোপের প্রস্তাব করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ছয়টি প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে রয়েছে- ধনী-বিত্তশালীদের ওপর সম্পদ কর আরোপ করা, সুপার-ডুপার ধনীদের ক্ষেত্রে করহার বাড়ানো, শেয়ারবাজার ও বন্ডবাজারে বড় বিনিয়োগের ওপর সম্পদ কর আরোপ করা, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর আরও করা, কালো টাকা বাজেয়াপ্ত ও উদ্ধার করা এবং পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার করা। অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে করোনা প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা বিচার-বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য খাতে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা’ নামে নতুন একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর