বুধবার, ২ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

রামেক হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপে অন্যান্য সেবা ব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রামেক হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপে অন্যান্য সেবা ব্যাহত

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোরসহ আশপাশের জেলার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউসহ অক্সিজেনের ব্যবস্থা না থাকায় করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়া রোগীরা উন্নত চিকিৎসার আশায় ছুটে আসছেন রামেক হাসপাতালে। এসব রোগীকে সামাল দিতে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের সরিয়ে ওয়ার্ডগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেডের ব্যবস্থা করে দিতে বাধ্য হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে করে হাসপাতালটিতে অন্যান্য রোগের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। গত ছয় দিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি আছেন ২১৬ জন। এক হাসপাতালেই করোনা রোগীসহ সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে গিয়ে নতুন করে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী সংকট দেখা দিয়েছে হাসপাতালটিতে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বল্প জনবল দিয়েই তাদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করে চলেছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে রাজশাহীর সদর হাসপাতাল বারবার চালুর দাবি জানানো হলেও, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এই হাসপাতালটির অবকাঠামো সংস্কার করে চালু করা যায়নি।

 করতে বিপুল অর্থের পাশাপাশি অন্তত দুই মাস সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হাসপাতালটি চালু করতে এরই মধ্যে গণপূর্ত অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর রাজশাহী মহানগরী সবচাইতে বেশি করোনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই শহরে সীমান্তবর্তী এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ নানা কাজে ও অজুহাতে এসে ভিড় করছেন। রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, শুরুর দিকে রামেক হাসপাতালে ৫০টি বেড করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হলেও, এখন সেই বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করে সেখানে ২৬৪টিতে উন্নীত করা হয়েছে। প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, সেই সঙ্গে বৃদ্ধি করা হচ্ছে বেডের সংখ্যা। আর সেই বেডের সংকুলান করা হচ্ছে ননকভিড রোগীদের সরিয়ে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, সাধারণ সময়ে ১ হাজার ২৫০ বেডের এই হাসপাতালে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে করোনার কারণে এখন গড়ে ১২০০ থেকে ১৩০০ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। খুব গুরুতর রোগী না হলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের স্বার্থেই এমনটা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, করোনা রোগীদের আলাদাভাবে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে। এসব বিষয় সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। তবে কোনো রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, রামেক হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের সরিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অক্সিজেন ও আইসিইউ সুবিধা থাকায় রামেক হাসপাতালে রাজশাহীর বাইরের জেলার রোগীরাও ভিড় করছে। উপসর্গ দেখা দিলেই ভয়ে রোগীরা আগেভাগেই হাসপাতালে এসে ভর্তি হচ্ছে।

ডা. নওশাদ আলী আরও বলেন, রাজশাহী সদর হাসপাতাল চালু করার বিষয়ে শুরু থেকেই বলা হচ্ছে। এতে করে রামেক হাসপাতালে রোগীর চাপ কমবে। তবে এই মুহূর্তে সদর হাসপাতাল চালু করা সম্ভব নয়। করোনা ইউনিট চালু করতে গেলে সেখানে নতুন করে অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর বিষয় আছে। আবার দীর্ঘদিন সদর হাসপাতাল বন্ধ থাকার ফলে এর অবকাঠামো নতুন করে সংস্কার করার প্রয়োজন আছে। আমরা সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। এটি চালু করতে অর্থ ও সময় দুটোরই প্রয়োজন। আমরা এরই মধ্যে গণপূর্ত অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে তারা কাজ করবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর