শনিবার, ৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ভয়াবহ হুমকির মুখে ‘ইকোসিস্টেম’

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

দখল দূষণ ভরাটে ধ্বংস হচ্ছে দেশের অন্যতম প্রধান নদী কর্ণফুলী। প্রতিদিনই কর্ণফুলীতে পড়ছে গৃহস্থালি ও শিল্প-বাণিজ্যিক বর্জ্য। নদীর তলদেশে জমেছে ৭ থেকে ১০ মিটার স্তরের পলিথিন। মহানগরের ছোট-বড় ৫৭টি খালের বেশির ভাগই এখন অস্তিত্বহীন। অনেকটা প্রতিযোগিতা করেই কাটা হচ্ছে পাহাড়। বাড়ছে পরিবেশের ক্ষতিকারক পলিথিনের ব্যবহার। প্রকৃতিকে ধ্বংসের সব আয়োজন যেন ধারাবাহিকভাবে চলছে। এসব কারণে বিশ্বজুড়েই ইকোসিস্টেম এখন ভয়াবহ হুমকির মুখে। পরিবেশের এমন বিপর্যস্ত-দুর্বিষহ অবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার করা’ (Ecosystem Restoration) এবং স্লোগান ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ করি, প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করি’ (Join Generation Restoration)। পরিবেশ রক্ষা ও সচেতনতায় ১৯৭৪ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীতে কোনো একক ভূখন্ডে অবস্থিত জীব ও জড়বস্তুর পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় যে অনুকূল বসবাসনীতি গড়ে ওঠে তাকেই ইকোসিস্টেম বলে। ফলে ইকোসিস্টেম হচ্ছে পৃথিবীর সব জীববৈচিত্র্যের টিকে থাকার মূল ভিত্তি। একই সঙ্গে পৃথিবীর পরিবেশ ও জলবায়ু স্থিতিশীল রেখে সমস্ত জীবের বসবাসের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞসূত্রে জানা যায়, বিশ্বজুড়েই ইকোসিস্টেম ভয়াবহ হুমকির মুখোমুখি। মানুষ নিজের চাহিদা পূরণে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও আবাসন, বন উজাড়, খাল-নদী-পুকুর-জলাভূমি দখল, ভরাট ও দূষণ, সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, নির্বিচারে বৃক্ষ ও পাহাড় নিধন, বনভূমি উজাড়, মাটির ক্ষয় সহ নানা কারণে পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেমগুলো বিপর্যস্ত।

তাই এসব অভ্যাস পরিবর্তন করে ইকোসিস্টেমকে সুরক্ষা বা পুনরুদ্ধার জরুরি মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে দেশে বহুমাত্রিক ইকোলজিক্যাল এলাকা আছে। এর মধ্যে সাগর, উপকূল, লেক, বিল, হাওর, নদীর মতো জলজ ইকোসিস্টেম; পাহাড়, সমতলভূমি, দ্বীপাঞ্চল, সুন্দরবন, সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলের মতো বিচিত্র রকমের জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ ইকোসিস্টেমও আছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘আমাদের ইকোসিস্টেমগুলোকে যদি এখন থেকে রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া না হয় তাহলে কেবল নিজেদের ধ্বংস করব না, যে পৃথিবীতে আমরা বাস করি তার অস্তিত্বও হুমকির সম্মুখীন হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাস-অযোগ্য অসুস্থ পৃথিবীই রেখে যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাস্তুতন্ত্র আমাদের অমূল্য সুবিধা দিয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে একটি স্থিতিশীল জলবায়ু এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের বায়ুর উৎপাদন; পানি, খাদ্যসহ সব ধরনের মৌলিক উপকরণ সরবরাহ; প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রোগ থেকে সুরক্ষা করে আসছে। প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানগুলো আমাদের পরিচয়, শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারী তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী বলেন, ‘চট্টগ্রামের পাহাড় ও নদ-নদী এবং পরিবেশ রক্ষায় নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয়। একই সঙ্গে জরিমানাও করা হচ্ছে। কিন্তু কেবল অভিযান ও জরিমানা দিয়ে পরিবেশ দূষণ রোধ এবং পরিবেশ রক্ষা যাবে না। এজন্য সবাইকেই নিজ অবস্থান থেকে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার হিসাবমতে প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ লিটার গৃহস্থালি বর্জ্য, কয়েক শ টন শিল্পকারখানার কেমিক্যাল নদীতে পড়ে। চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা কমিটির তথ্যমতে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির সঙ্গে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টন পলি গিয়ে পড়ে কর্ণফুলীতে। মানুষের বর্জ্য, পলিথিন ও পলি মিলে কর্ণফুলীতে প্রায় ৭ থেকে ১০ মিটার পলিথিনের স্তর তৈরি হয়েছে। এসব বর্জ্য বাধাগ্রস্ত করছে ড্রেজিংকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর