মঙ্গলবার, ৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

বশেমুরকৃবির দেশি জাতের চেরি টমেটো উদ্ভাবন

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

বশেমুরকৃবির দেশি জাতের চেরি টমেটো উদ্ভাবন

দেশের কৃষক এবং ভোক্তার চাহিদায় প্রমাণ সাইজের দেশীয় টমেটোর পরে নতুন করে জনপ্রিয় হচ্ছে চেরি টমেটো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষণা) প্রফেসর ড. এ. কে. এম আমিনুল ইসলাম সম্প্রতি বিউ চেরি টমেটো ২, বিউ চেরি টমেটো ৩, বিউ চেরি টমেটো ৪ ও বিউ চেরি টমেটো ৫ নামে চারটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। তার উদ্ভাবিত চেরি টমেটোর জাত তিনটি এ মাসে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বাণিজ্যিকভাবে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করে। গবেষক জানান, আমাদের দেশে ভোক্তা ও চাষি পর্যায়ে চেরি টমেটোর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদের প্রায় বেশির ভাগই বিদেশি কোনো জাতকে দেশি আবহাওয়ার উপযোগী করে চাষ করা হচ্ছে। এই জাতগুলোই দেশে প্রথম বিদেশি জাতের চেরি টমেটোর সঙ্গে দেশীয় টমেটোর সংকরায়ন এবং পরবর্তীতে পিউর লাইন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাপ্ত একেবারেই নতুন জাত হিসেবে উদ্ভাবন করা হয়েছে। দেশীয় স্বাদকে অক্ষুণ্ণ রেখে চেরি সাইজ আনতে গবেষককে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭-৮ বছর। বিউ চেরি টমেটোর জাতগুলো দেশি আবহাওয়ায় কোনো প্রকার অতিরিক্ত যত্নবিহীনভাবে দেশি টমেটোর মতোই শীতকালে চাষযোগ্য, উচ্চ ফলনশীল, আকর্ষণীয় আকৃতি, বর্ণ, খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু, মিষ্টি, কম বীজযুক্ত বা প্রায় বীজবিহীন এবং পুষ্টিকর। গাছপ্রতি ফলন ২.৫-৩.৫ কেজি। এ ছাড়াও সুপার শপগুলোতে যে বিদেশি বীজবিহীন বা কম বীজযুক্ত চেরি টমেটো পাওয়া যায় তার বেশির ভাগই প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়। সে ক্ষেত্রে এই জাতগুলো আমাদের জন্য হতে পারে বিদেশি জাতগুলোর পরিপূরক। তাছাড়া যে কোনো সবজির মধ্যে রান্নার পর টমেটোর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলি সবচেয়ে বেশি অক্ষুণ্ণ থাকে। আর নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলো রান্না ছাড়াই পাকা অবস্থায় আঙ্গুরের মতো খাওয়া যায় বিধায় এবং এদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলি বেশি থাকায় মানবদেহে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করবে বলে গবেষক প্রফেসর আমিনুল ইসলাম মনে করেন। তাছাড়া টমেটোতে বেশি পরিমাণে লাইকোপিন থাকায় ত্বকের যতেœ চেরি টমেটো খুবই উপকারী। চেরি টমেটো গাছের ক্যানোপি কম হওয়ায় ছাদ বাগানেও এ জাতগুলো সহজেই উৎপাদন করা যাবে। এই জাতগুলোর একজন সহযোগী ব্রিডার হিসেবে একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা মোস্তফা ইরা বলেন, স্যারের গবেষণা বরাবরই ভিন্নধর্মী থাকায়, ছাত্র অবস্থায়ই এই চেরি টেমটো নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী হই এবং পরবর্তীতে এর উদ্ভাবন প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকি। দেশের মানুষের উৎপাদন ও খাদ্য চাহিদায় এটি কৃষকের এবং ভোক্তার প্রথম পছন্দ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া জানান, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো জাতই এসেছে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের এই অধ্যাপকের হাত ধরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক জাত উদ্ভাবনে তিনি এবার উচ্চমূল্যের চেরি টমেটোর চারটি জাত যোগ করলেন যাদের চাষ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে মানুষ উপকৃত হবে। জাতগুলোর আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য এরা বাণিজ্যিক উৎপাদন কিংবা ছাদবাগান, উভয় ক্ষেত্রেই সমান জনপ্রিয়তা পাবে। দেশি আবহাওয়া উপযোগী করে উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল এ জাতগুলো দেশের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা চেরি টমেটো চাষ করে বেশি লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর