শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ছয় ধরনের সাইবার অপরাধ বেড়েছে

এটিএম কার্ড হ্যাকিংয়ের মতো নতুন অপরাধ শনাক্ত, নারীরা বেশি শিকার, ঢাকায় বেশি ভুক্তভোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ছয় ধরনের সাইবার অপরাধ বেড়েছে। এটিএম কার্ড হ্যাকিংয়ের মতো নতুন অপরাধ শনাক্ত করা হয়েছে। নারীরা বেশি শিকার হচ্ছেন সাইবার অপরাধের। এই অপরাধের ভুক্তভোগী ঢাকায় বেশি। তবে আক্রান্ত হওয়ার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগের হার হতাশাজনক। গতকাল সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিএএফ) অনলাইনে  ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২১’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সিএএফ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কাজী মোস্তাফিজুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, ২০১৯-২০ সালে সাইবার অপরাধের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং বা তথ্য চুরি। জরিপে এটিএম কার্ড হ্যাকিংয়ের মতো একটি নতুন অপরাধ শনাক্ত করা হয়। মহামারীতে অনলাইন কেনাকাটা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের তুলনায় অধিক মাত্রায় মানুষ অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

জরিপে সাইবার অপরাধের তুলনামূলক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনার হার ২৮ দশমিক ৩১ শতাংশ, যা প্রথম অবস্থানে আছে। অপরাধের ধরনে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অপপ্রচার। যার হার ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি/ভিডিও (পর্নোগ্রাফি) ব্যবহার করে হয়রানির হার ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তবে ফটোশপে ভুক্তভোগীর ছবি বিকৃত করে হয়রানির ঘটনা কমেছে। যার হার পাঁচ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অপরাধের ধরনে অনলাইনে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দেওয়ার ঘটনা তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে। এর হার ১৪ দশমিক ১৬ শতাংশ।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। ভুক্তভোগীর  হার  ৮৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।

দেখা যায়, ১৮ থেকে ৩০ বছর  বা ১৮-এর চেয়ে কম বয়সের ভুক্তভোগীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইডি হ্যাকিংয়ের মতো সাইবার অপরাধের শিকার বেশি হয়েছেন। পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৪৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ আর নারীর সংখ্যা ৫৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। পুরুষদের তুলনায় নারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানি এবং পর্নোগ্রাফির শিকার বেশি হয়েছেন। আর নারীদের তুলনায় পুরুষরা মোবাইল ব্যাংকিং, এটিএম কার্ড হ্যাকিং এবং অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার বেশি হয়েছেন।

জরিপের এলাকাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি সাইবার অপরাধের ভুক্তভোগী ঢাকা বিভাগে (৫৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ)। আর সর্বনিম্ন সিলেট ও বরিশালে। জরিপে ভুক্তভোগীদের পেশা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সর্বোচ্চ ৬১ দশমিক ৩১ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরপর যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ কলেজ শিক্ষার্থী। আট দশমিক ৩৩ শতাংশ বেসরকারি চাকরিজীবী এবং সর্বনিম্ন এক দশমিক ১৯ শতাংশ সাংবাদিক সাইবার অপরাধের শিকার।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক আইন সম্পর্কে জানেন ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। এর মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক আইন সম্পর্কে অন্য বয়সীদের তুলনায় বেশি জানেন। তবে আইন সম্পর্কে বেশি জানার পরও এই বয়সী ভুক্তভোগীর সংখ্যা বেশি। জরিপে প্রাপ্ত তথ্যে ১৬৮ জন ভুক্তভোগীর মধ্যে মাত্র ৩৬ জন সমস্যা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন; যা মোট ভুক্তভোগীর মাত্র ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অভিযোগকারীদের মধ্যে মাত্র ২২ দশমিক ২২ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে আশানুরূপ ফল পেয়েছেন। এর মধ্যে কীভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে হয় তা না জানার কারণে সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ২০ শতাংশ ভুক্তভোগী অভিযোগ করেনি। আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানির ভয়ে ২০ দশমিক ২০ শতাংশ ভুক্তভোগী অভিযোগ করেনি।  

সর্বশেষ খবর