রবিবার, ২০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
ঝুঁকির মুখে চিকিৎসক-নার্স

‘মৃত্যুপুরী’ রামেক হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

‘মৃত্যুপুরী’ রামেক হাসপাতাল

করোনায় ‘মৃত্যুপুরী’ হয়ে উঠেছে এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিদিন এখানে গড়ে ১০ জনের মৃত্যু হচ্ছে করোনা আক্রান্ত হয়ে। আসছে নতুন রোগী। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। গত ১৯ দিনে (১ জুন সকাল ৬টা থেকে ১৯ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত) এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ১৯৩ জন। এর মধ্যে শনাক্ত হওয়ার পর মারা গেছেন ১০৫। বাকিরা মারা যান উপসর্গ নিয়ে। রাজশাহীতে করোনা শনাক্তের হার চল্লিশের ঘরেই ওঠানামা করছে। ৩০৯ শয্যার করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিলেন ৩৬৫ জন। এর মধ্যে ২০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন ১৯ রোগী। এরা সবাই মুমূর্ষু রোগী। বিপুলসংখ্যক রোগী আইসিইউর অপেক্ষায় আছেন। সব মিলিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে রামেকের করোনা ইউনিটে। একের পর এক রোগীর যখন মৃত্যু হচ্ছে, তখন পর্যাপ্ত সুরক্ষা না থাকায় কিছুটা ভীতি আছে চিকিৎসক-নার্সদেরও। এ পরিস্থিতিতে ঝুঁঁকি থাকছেই বলে জানিয়েছেন করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা। নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরুতে রামেক হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের আইসোলেশন ব্যবস্থা ছিল, ছিল থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমানে সে ব্যবস্থা নেই। খাবার-সুরক্ষা নিজ দায়িত্বে করছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। তারা বলেন, সুরক্ষায় মেডিকেল থেকে শুধু মাস্ক ও পিপিই দেওয়া হচ্ছে। সেটিও পর্যাপ্ত নয়। অনেক সময় রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে পিপিই পরার সময় পাওয়া যায় না, তখন শুধু মাস্ক আর ফেসশিল্ড পরেই ছুটে যেতে হয় রোগীর কাছে। খাওয়ার ব্যবস্থা নিজের দায়িত্বে করতে হয় চিকিৎসকদের। এ ক্ষেত্রে যেসব চিকিৎসকের বাসা হাসপাতালের আশপাশে তারা বাড়ি থেকেই খাবার নিয়ে আসেন। আর যারা দূরে থাকেন তারা হাসপাতালের ক্যান্টিন অথবা কোনো রেস্তোরাঁ থেকে অর্ডার করে খাচ্ছেন। থাকার বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় ডিউটি শেষে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই পরিবারের সঙ্গে মিশতে হচ্ছে তাদের। চিকিৎসকরা আরও জানান, পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না, দু-একদিন পরপরই ওয়ার্ড বাড়াতে হচ্ছে। সেটাও রোগীতে পরিপূর্ণ হতে সময় লাগছে না। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু তাদের পিছু হটার সুযোগ নেই। তারা জানান, হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ অক্সিফ্লোমিটার সংকট আছে। ভেন্টিলেটর থাকলেও মাস্ক নেই। এতো কিছুর সংকট নিয়েও চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা। রামেক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, সিনিয়র-জুনিয়র মিলে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করছেন ২৫২ জন চিকিৎসক। শুধু চিকিৎসকই নন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কোর্স শিক্ষকরাও যুক্ত হচ্ছেন চিকিৎসায়। এ ছাড়া রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্বপালন করছেন ৫৮০ জন নার্স এবং ১৫২ চিকিৎসাকর্মী। চিকিৎসকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন তারা। তবে দায়িত্বপালনে এসে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সম্মুখ সারির এসব যোদ্ধা। করোনা ইউনিটের চিকিৎসক-নার্সদের আইসোলেশন সুবিধা বাতিল করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী। তিনি বলেন, সংক্রমণের প্রথম দিকে ব্যাপকহারে চিকিৎসক-নার্সরা সংক্রমিত হচ্ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর