রবিবার, ২০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
বিশ্ব বাবা দিবস আজ

মেলে না পিতৃত্বকালীন ছুটি!

জিন্নাতুন নূর

শাফিন আহমেদ। কাজ করেন একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে। ঢাকায় স্ত্রী শম্পাকে নিয়ে থাকেন। বছর খানেক আগে শাফিন-শম্পা দম্পতির কোলে আসে এক পুত্র সন্তান। সন্তান প্রসবের দুই দিন আগে থেকে শম্পার কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এই দম্পতির পরিবারের অন্য সদস্যরা ঢাকার বাইরে থাকায় শাফিনকে একাই হাসপাতালে দৌড়াতে হয়। তাদের সন্তানের জন্মের পর শম্পা ও নবজাতক দুজনের অবস্থাই ছিল নাজুক। প্রায় ১৫ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। এই সময় অফিস থেকে দুই দিন ছুটি পেলেও বাকি দিন অফিসে উপস্থিত না থাকায় কর্তৃপক্ষ শাফিনকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সাফিন বলেন, ‘সেই যাত্রায় অনেক অনুরোধে আমার চাকরি রক্ষা করতে পারলেও আমার মতো সবাই এই সুযোগ পান না। পিতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়া এখন সময়ের দাবি।’ শাফিনের মতো দেশের অন্য বাবারাও চান পিতৃত্বকালীন ছুটি। যে সময় তার স্ত্রী ও সন্তানের দেখভাল করার কথা সে সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা অফিসে কাটান। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও নেপালেও পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রয়েছে। এ ছাড়া নরওয়ে, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও কেনিয়াসহ নানা দেশে বাবারা বিভিন্ন মেয়াদে পিতৃত্বকালীন ছুটি উপভোগ করছেন। বাংলাদেশে হাতে গোনা কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এই ছুটি উপভোগ করতে পারেন। এই সংখ্যা হাতে গোনা। এই অবস্থায় আজ পালিত হবে বিশ্ব বাবা দিবস। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিধি অনুবিভাগ) আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এসব বিষয়ে সাধারণত অর্থ মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দেয়। অর্থ মন্ত্রণালয় এটি নিয়ে একসময় কাজ করলেও পরে এটি আর আলোর মুখ দেখেনি। ধারণা করছি, এ ব্যাপারে হয়তো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটির পাশাপাশি ভবিষ্যতে পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিল। কিন্তু এই ছুটি বাংলাদেশের বাবারা আদৌ উপভোগ করতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। সে সময় মা ও শিশু সন্তানের সুষ্ঠু পরিচর্যা করতে কর্মজীবী বাবার জন্য ১৫ দিনের ছুটি প্রদানের চিন্তা-ভাবনা ছিল। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও দেড় বছর আগে সাভার লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ‘ভিশন গার্ডেন’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, সরকারি কর্মচারীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারেন এ জন্য পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার বিষয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে।

এর আগে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান করার প্রস্তাব করেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন। পিতৃত্বকালীন ছুটি বাস্তবায়নের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে দাবি-দাওয়া থাকলেও সে সময় বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিষয়টি সে সময় সংশ্লিষ্টদের নজরও কাড়ে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে ২০১০ সালে মাতৃত্বকালীন ছুটি চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করা হয়। সেই প্রস্তাবে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টিও ছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় পিতৃত্বকালীন ছুটির প্রস্তাব আলাদাভাবে উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়। এর এক বছর পর ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি কার্যকর করা হলেও পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মায়ের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পিতৃত্বকালীন ছুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে একক পরিবার এবং কর্মজীবী বাবা-মায়েদের ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটির পাশাপাশি পিতৃত্বকালীন ছুটিও জরুরি। আবার সন্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরির ক্ষেত্রেও এই ছুটি বেশ কার্যকর হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর