শিরোনাম
বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

সরঞ্জাম কিনতে না পারায় ফেরত যাচ্ছে ২ কোটি টাকা

রামেক হাসপাতালের পাঁচ প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভূক্ত জামানত বাজেয়াপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

ঠিকাদার সিন্ডিকেটের কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে দরপত্র আহ্বান করেও ২ কোটি টাকার সার্জিক্যাল সামগ্রী কেনা যায়নি। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে কার্যাদেশের মেয়াদ। অর্থবছর শেষে এখন বিপাকে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েও মালামাল সরবরাহ না করায় পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। রোগীদের জন্য গজ, ব্যান্ডেজ, ক্যাটগার্ড, কেমিক্যালসহ সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি কিনতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দরপত্র আহ্বান করেন রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর চুক্তির জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেওয়া হলেও তাতে সাড়া মেলেনি। এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে কার্যাদেশের মেয়াদ। নির্বাচিত হয়েও মালামাল সরবরাহ করতে চুক্তিতে সাড়া দেয়নি রাজশাহীর জানে আলম ট্রেডার্স, ঢাকার এনএইচ ট্রেডার্স ও আইয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, নাটোরের এমদাদুল হক ও পাবনার আরজেডএস এন্টারপ্রাইজ।  রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাওয়ার সুযোগ না দিতেই সিন্ডিকেট করেছিল খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো।

 এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঠিকাদারদের সিন্ডিকেটের কারণে রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। এখন অর্থবছরও শেষ। এ খাতে বরাদ্দ টাকা ফেরত দিতে হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। তবে সাড়া না দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো কালো তালিকাভুক্ত এবং তাদের দেওয়া জামানতের টাকাও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, রাজশাহী-২ আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘দরপত্রে অংশ নিয়ে মালামাল সরবরাহ করবে না এ রকম হওয়া ঠিক নয়। এতে রাজশাহীতে চিকিৎসা নিতে আসা দরিদ্র রোগীরা বঞ্চিত হলেন। সরকার বরাদ্দ দেওয়ার পরও আমরা খরচ করতে পারলাম না। যারা এমনটা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে দরপত্র কমিটি যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা ঠিকই আছে বলে আমি মনে করি।’

তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, করোনার কারণে সরঞ্জামের দাম বেড়ে যায়। তারা আগেই বিষয়টি জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন। জানে আলম ট্রেডার্সের মালিক জানে আলম খান জনি বলেন, ‘আমরা আগেই চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাড়া না দিয়ে তিন মাস পর তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।’ নাটোরের এমদাদুল হক বলেন, ‘করোনার কারণে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। আমরা যখন দরপত্রে অংশ নিই তখন করোনা ছিল না। বিষয়টা কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও আমাদের কালো তালিকাভুক্ত করেছেন।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, ‘যারা সরকারি অর্থ ফেরত যাওয়ার জন্য দায়ী তারা চরম অন্যায় করেছেন। কারণ স্বাস্থ্য খাতের এখন যে অবস্থা তাতে রাজশাহীর মানুষ বঞ্চিত হলো।’ সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক সভাপতি অধ্যাপক দীপকেন্দ্রনাথ দাস বলেন, ‘ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট সব সময় ছিল। এটি এখন প্রকাশ্যে এসেছে। এদের শুধু কালো তালিকাভুক্ত করলে হবে না, আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া দরকার।’

দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার পর মালামাল সরবরাহে সাড়া না দেওয়ায় পাঁচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দুই বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাদের জামানতের টাকাও।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর