বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে থানা পুলিশের চাঁদাবাজি

সুত্রাপুরের দুই পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতার

মাহবুব মমতাজী

মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে থানা পুলিশের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে এমন ঘটনায় সূত্রাপুর থানার ওই কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করেছে পল্টন থানা পুলিশ। তারা হলেন- এসআই রহমাত উল্লাহ ও এএসআই রফিকুল ইসলাম। গত ২০ জুন পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেন্টু মিয়ার নেতৃত্বে একটি দল সূত্রাপুর থানায় এসে ওই দুজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের বিষয়টি অনেকটা গোপন রেখে তাদের আদালতে পাঠানো হয় বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে গতকাল পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, সূত্রাপুর থানার এই দুই অফিসার একজন মাদক কারবারিকে ধরার কথা বলে শান্তিনগরে আসেন। কিন্তু তারা তাকে না ধরে সামারি করে চলে যান (অর্থাৎ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন)। তবে মামলায় মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনায় দুজন সাধারণ ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। পরে তাদের গ্রেফতার করা হলে তারা পুলিশের দুজন সদস্যের নাম জানান। এরপরই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ফরহাদ হোসেন ও হাসিব হাসান শোভন নামে আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লা। ভুক্তভোগী নাজমুল হক সুমনের মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, তার বাসা শান্তিনগরের ইস্টার্ন পিস ভবনে। সেখানে গত ১৪ জুন রাত ৯টার দিকে সাদা পোশাকে দুজন তাদের বাসার দরজায় নক করেন। ভিতর থেকে সুমনের বাবা দরজা খুলে দিলে তারা নিজেদের ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে প্রবেশ করেন। এরপর সুমনের রুমে যান। এরপর রুমের আলমারি, ওয়ারড্রব, বিছানা ওলট-পালট করেন। তাদের মধ্যে একজন পকেট থেকে ইয়াবার মতো দেখতে কিছু ট্যাবলেট সুমনের রুমের টেবিলের ওপরে রাখেন। আর সুমন ইয়াবার ব্যবসা করেন বলে হুমকি দেন। এ থেকে বাঁচতে চাইলে তাদের টাকা দিতে হবে বলে জানান। সুমন উপায় অন্ত না পেয়ে নিজের কাছে থাকা ৫৫ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেন। এ সময় ডিবির পরিচয় দেওয়া একজন সুমনের মোবাইল ফোন হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তার (সুমনের) পরিচিত ফরহাদকে তার বাসায় আসতে বলেন। ফরহাদ রাত ১১টার দিকে সুমনের বাসায় যান। বাসায় যাওয়ার পর ডিবি পুলিশের একজন ফরহাদের হাতে হ্যান্ডকাফ পরান। এ সময় তারা বলেন, ফরহাদকে ছাড়াতে হলে তার মোটরসাইকেলটি দিতে হবে এবং পরে ১ লাখ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে আসতে হবে। টাকা দেওয়ার শর্তে তারা ফরহাদকে ছেড়ে দেন। যাওয়ার সময় কোনো ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করার জন্য হুমকি দেন। তারা ফরহাদের মোটরসাইকেলটি নিয়ে যান। ফরহাদ ও তার বন্ধু শোভন গত ১৬ জুন বেলা ১১টায় সুমনের বাসায় আসেন। শোভন মোটরসাইকেলটি ছাড়িয়ে আনার জন্য সুমনকে চাপ দেন। ফরহাদ এ সময় ডিবি পরিচয় দেওয়া দুজনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কথা বলেন এবং সুমনের সঙ্গে ফোনে ধরিয়ে দিলে তারা সুমনকে জানান, ১ লাখ টাকা পেলে তারা মোটরসাইকেল ফেরত দেবেন।

তখনো তারা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নিষেধ করেন। পরে সুমন বুঝতে পারেন যে, ফরহাদ, শোভন এবং ডিবির পরিচয় দেওয়া দুজন যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে নাটক করে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।

এদিকে সূত্রাপুর থানা থেকে জানা যায়, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও পরিদর্শকের (তদন্ত) সঙ্গে কথা বলেই মূলত মাদক ব্যবসায়ী ধরবেন জানিয়ে শান্তিনগর গিয়েছিলেন এসআই রহমাত উল্লাহ ও এএসআই রফিকুল ইসলাম। কিন্তু তারা মাদক ব্যবসায়ী না ধরে টাকা নিয়ে ফিরে আসেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর