সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

রাবি তহবিলের ১০ কোটি টাকা ফেরত যাওয়ার শঙ্কা

নিরাপত্তা শঙ্কায় শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

আগামী ৩০ জুনের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত না হলে তহবিলের ১০ কোটি টাকা ফেরত যাবে সরকারি কোষাগারে। প্রশাসন বলছে, এই টাকা ফেরত গেলে আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বরাদ্দের ওপর তার প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে প্রশাসনিক ভবন, শ্রেণিকক্ষ, আবাসিক হল ও পুকুর সংস্কারের কাজে বিঘ্ন ঘটবে। আর্থিক কমিটির সভা না হওয়ায় আবাসিক হল সংস্কারের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ করা ৫ কোটি এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে উদ্বৃত্ত থাকা ৫ কোটি টাকা ফেরত যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। রুটিন দায়িত্ব পালনকারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা এ নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেন। হল সংস্কারের ৫ কোটি : অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা জানিয়েছেন, মাসখানেক আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে আবাসিক হলগুলোর ক্ষয়ক্ষতির অবস্থা জানতে চায়। সেটি নিরূপণের পর মন্ত্রণালয়কে জানালে ৫ কোটি টাকার কিছু বেশি বরাদ্দ করে। বরাদ্দ ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখা হল প্রভোস্টদের কাছ থেকে সংস্কার কাজের চাহিদাপত্র সংগ্রহ করে। পরে সেটা এস্টিমেট করে অর্থ কমিটির অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

 বর্তমান উপাচার্য জানিয়েছেন, হলগুলো সংস্কারের জন্য ফাইন্যান্স কমিটির সভা আহ্বান করা হয় গত ১৯ জুন। কিন্তু আন্দোলনরতদের জন্য সেটি সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে উদ্বৃত্ত আছে ৫ কোটি টাকা। অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা জানান, এই টাকার খাতটা এমন, অনেক ঠিকাদার আছেন, যারা কাজ করেও বিল পাননি। আবার বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ অনুযায়ী ব্যয় কখনো কম, কখনো বেশি হয়েছে। হিসাবগুলো (ভ্যারিয়েশন) মূল্যায়ন করে যেটি থাকবে সেটি উদ্বৃত্ত। সেই উদ্বৃত্ত টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যয় করতে হলে প্রয়োজন অর্থ কমিটির সভা। ওই সভায় উদ্বৃত্ত অর্থ কীভাবে, কোথায় ব্যয় হবে সেটি নির্ধারিত হয়ে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির সদস্য অধ্যাপক জাফর সিদ্দিকী জানান, আগামী ৩০ জুন শেষ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি অর্থ বছর। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও বরাদ্দ অনুযায়ী সব হিসাব শেষ করার বাধ্যবাধ্যকতা আছে। একই সঙ্গে এগুলো অর্থ কমিটির সভায় অনুমোদন করা জরুরি। সব প্রক্রিয়া যথাযথভাবে না হলে অর্থবছর শেষে কাজ শুরু না করতে পারলে তার বরাদ্দ ও উদ্বৃত্ত টাকা ফেরত যাবে। সব মিলিয়ে সভা না হলেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতির মুখে পড়বে।

অর্থ কমিটির ও সিন্ডিকেট সভা যাতে ভালোভাবে হয় সেজন্য গত সোমবার প্রশাসন ভবনের কনফারেন্স কক্ষে আলোচনায় অংশ নেয় রাজশাহী-৩ আসনের এমপি ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রুটিন উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়াসহ অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্তরা। সেখানে তিন ঘণ্টার আলোচনার পর চলমান আন্দোলন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্তরা।

ওইদিন সভা শেষে আয়েন উদ্দিন ও ডাবলু সরকার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে অচল অবস্থার সৃষ্টি না হয় এবং চাকরি নিয়ে উদ্ভূত সংকট নিরসন হয় সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্তরা আন্দোলন থেকে সরে আসবে। কিন্তু পরদিন আন্দোলনরতদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়। একটি অংশ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। সেদিন সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সিন্ডিকেট সভা রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপরও অবস্থান চালিয়ে যেতে থাকে আন্দোলনকারীরা। পরদিন রাত পর্যন্ত চলে অবস্থান কর্মসূচি।

১০ কোটি খরচে উদ্যোগী প্রশাসন : বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি যাতে না হয়, সে কারণে অর্থ কমিটির সভা করতে বদ্ধপরিকর প্রশাসন। প্রয়োজনে কঠোর হবেন তারা এমনটি ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেবেন। যদি কোনোভাবেই না হয়, তাহলে বাজেটের বরাদ্দ শেষ করার জন্য সময় বৃদ্ধির আবেদন করবেন।

নিরাপত্তাহীনতার চিত্র তুলে ধরে পুলিশে অভিযোগ : সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাহীনতার চিত্র তুলে ধরে পুলিশের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা জানিয়েছেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এ নিয়ে শিক্ষকদের একাংশ তাঁর কাছে নিরাপত্তার দাবিতে লিখিত আবেদনও করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত ও মৌখিক  অভিযোগ করেছেন। এ পরিস্থিতির জন্য তিনি সম্প্রতি অ্যাডহকে নিয়োগ পাওয়া ১৩৮ জনকে দায়ী করেছেন।

তিনি জানান, ফাইন্যান্স কমিটির সভা ও সিন্ডিকেট না করার জন্য তাকে ছাড়াও উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের আমরা আগেই জানিয়েছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া আমার পক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়।’

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহান তাঁর মেয়াদের শেষ দিনে ‘অ্যাডহকে’ ১৩৮ জনকে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে ওইদিন রাতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি তদন্ত শেষে গত ২৩ মে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর