চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে নিয়মিত নালা-নর্দমা ও ড্রেন পরিষ্কার করে। কিন্তু যেখানেই পরিষ্কার অভিযান পরিচালিত হয় সেখানে এক তৃতীয়াংশই থাকে পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের বর্জ্য। এসব বর্জ্যে আটকে যায় পানি। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি নিষ্কাশনে অন্তরায় হয়ে আছে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যের বর্জ্য। পলিথিনের ভয়াবহ আগ্রাসনের শিকারের এমন সময়ে চট্টগ্রাম শহরকে জলাবদ্ধতামুক্ত রাখা, পরিবেশ রক্ষা ও কর্ণফুলী নদীর প্রবহমানতা ফিরিয়ে আনতে চসিকের উদ্যোগে আজ ‘পলিথিনমুক্ত চট্টগ্রাম’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরে বর্তমানে ৭০ লাখের মতো বাসিন্দা। নগরবাসীর ব্যবহৃত বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নেই। ফলে এসব বর্জ্য নগরের ছোট-বড় ৫৭টি খাল হয়ে সরাসরি গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। উল্লেখযোগ্য খালগুলোর মধ্যে চাক্তাই, রাজাখালী, বিবি মরিয়ম, কলাবাগিচা, ফিরিঙ্গি বাজার, বাকলিয়া, মহেশ, বোট ক্লাব ও ডোমখালী খাল রয়েছে। পলিথিনের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্যোগে কর্ণফুলী নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনার ২৫৮ কোটি টাকার ‘সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর খনন’ প্রকল্প। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের তিনটি ছোট ‘সাকশন ড্রেজার’ দিয়ে খননকাজ শুরু হয়। কিন্তু কর্ণফুলীর তলদেশে পলিথিনের স্তর জমায় খননকাজ ব্যাহত হয়। ফেরত যায় ড্রেজারটি। পরে দেশি আধুনিক ‘গ্র্যাব ড্রেজার’ দিয়ে কাজ করা হয়। তা ছাড়া কর্ণফুলীর এমন ত্রাহি অবস্থায় নদীর তলদেশ পলিথিনমুক্ত রাখতে ২৭ মে সংসদ ভবনে এক বৈঠকে নদীর সঙ্গে সংযোগ থাকা খালগুলোর মুখে নেট বসানোর পরামর্শ দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এর আগে জানুয়ারিতেও কর্ণফুলীর তলদেশের পলিথিন অপসারণ নিয়ে আলোচনা করে সংসদীয় কমিটি। চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পলিথিন নদীর স্বাস্থ্য, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নালা-নর্দমায় জমে নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে। এর ব্যবহার কীভাবে কমানো যায়, নালা-নর্দমায় কীভাবে কম ফেলা যায় এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরিকল্পিত মত নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বুধবার (আজ) ‘পলিথিনমুক্ত চট্টগ্রাম’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে।
চসিকের অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম বলেন, নগরের যেখানেই নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে সেখানেই থাকছে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব অপচনশীল বর্জ্যরে কারণে নালা-নর্দমা দিয়ে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে অনেক সময় অল্প বৃষ্টিতেও নিম্নাঞ্চলে পানি জমে যাচ্ছে।চসিকসূত্রে জানা যায়, বর্তমান নগরে পাকা নর্দমা আছে ৯৪৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থ। কাঁচা নর্দমা আছে ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থ। বর্তমানে ছোট-বড় মিলে নালা-নর্দমা আছে ৭৮৫টি। নগরে ছোট বড় খাল আছে ৫৭টি। এসব খালের মোট দৈর্ঘ্য ১৬১ কিলোমিটার ও গড় প্রস্থ ৭ দশমিক ৮ মিটার। নগরে প্রতিদিন আড়াই হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করে চসিক।