শিরোনাম
বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

স্ত্রীরসহ ওসি প্রদীপের সম্পত্তি রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে নেওয়ার নির্দেশ

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি টেকনাফ থানার  বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য রিসিভার নিয়োগ করতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান গতকাল এ আদেশ দেন। এর আগে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে গত বছরের ২৩ আগস্ট মামলা করে দুদক। বর্তমানে প্রদীপ কারাগারে রয়েছেন। তবে চুমকি কারণ পলাতক। দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওসি প্রদীপের সম্পত্তি এতদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ছিল। বর্তমানে মামলার তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। তাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনকে দেখভাল করতে আদেশ দিয়েছে। 

এই আদেশের পরপরই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন গতকাল রিসিভার নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন।

 আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রদীপ ও তার স্ত্রীর নামে থাকা সম্পত্তি ইতিপূর্বে আদালত ক্রোক করেছে। নগরীর পাথরঘাটায় থাকা ছয় তলা বাড়ি, ষোলশহরের বাড়ি, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাট রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে রিসিভার নিয়োগ করা হোক।

দুদক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, প্রদীপের বাবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) নিরাপত্তাপ্রহরী ছিলেন। ১৯৯৫ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে যোগ দেন প্রদীপ। ২০০২ সাল থেকে তার সম্পদগুলো দৃশ্যমান হতে থাকে। নগরীর পাথরঘাটা এলাকায় চুমকি কারণ তার বাবার কাছ থেকে একটি ছয় তলা ভবন দানপত্রমূলে পেয়েছেন বলে সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু চুমকির দুই ভাই ও আরেক বোন বাবার কাছ থেকে কোনো ভবন পাননি। তারা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছেন। এতে বোঝা যায়, প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ওই ভবন তৈরি করেছেন। কিন্তু কাগজপত্রে তার শ্বশুরের নামে রাখেন। ২০১৩ সালে শ্বশুরের কাছ থেকে দানপত্রমূলে নিবন্ধন করে নেন তিনি। ওসি প্রদীপের সব সম্পত্তিই তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে। চুমকি গৃহিণী। তার বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞাত আয়ের উৎস নেই। চুমকির নামে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তার মধ্যে তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে খরচ করেছেন ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। চুমকির আগের সঞ্চয়, উপহার, বাড়ি ভাড়া থেকে বৈধ আয় হিসেবে ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। বৈধ আয় বাদ দিলে চুমকির নামে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। এটা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে সম্পদ কিনে স্ত্রীর নামে রেখেছেন।

অন্যদিকে গত বছরের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রদীপসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর অসুস্থতার কথা বলে থানা থেকে ছুটি নিয়ে প্রদীপ চট্টগ্রামে আত্মগোপনে থাকেন। সেখান থেকে ৬ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। তারপর থেকে প্রদীপ কারাগারে রয়েছেন। সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্দেশে প্রদীপ, তার স্ত্রী, কক্সবাজারের পুলিশ সুপারসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর