বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে আমের বাজারে ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে অস্বাভাবিকভাবে কমেছে আমের দাম। আগে যে আমের দাম এ সময়ে ১২০০ টাকা মণ ছিল। এখন তার দাম ৬০০-৮০০ টাকা। হাটভরা পাকা আম। অনেক ক্রেতা, অনেক বিক্রেতা। কিন্তু দাম নেই আমের। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর আমের হাটে মিন্টু বসেছিলেন। তিনি জানান, আমের উৎপাদন ভালো হওয়া আর করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার এই হাটে আমের দাম নেই। চাষিরা কোনোরকমে ফেলে যাচ্ছেন। আম পেড়ে বিক্রি করে তো কারও কারও শ্রমিকের খরচও উঠছে না। এর মধ্যে বৃষ্টি বাগড়া দিচ্ছে। চারঘাট উপজেলার শলুয়া চামটা গ্রামের বাসিন্দা মিন্টু বাগান ইজারা নিয়ে আম চাষ করেন। তিনি বলেন, ‘বিষের দাম বেশি, আমের দাম কম। দেড় মণ আম বেচি এক প্যাকেট বিষের দাম উঠিছে। কী লাভ! মিন্টুর ভাষায়, গতবার কিছু লাভ হইছিল। এবার লস যাবি ম্যালা।’ রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার চাষিরা আম ভেঙে ভ্যানে করে বানেশ্বর বাজারে আনেন। এখানে সারাদিন অসংখ্য ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকে আম নিয়ে। বানেশ্বরের আড়ৎদাররা এসে আমের দাম বলেন। দরদামে হলে চাষিরা আম বেচে দেন। তারপর ওই ভ্যান আড়তে গিয়ে আম ওজন করে দিয়ে আসে। রাতেই আড়ৎ থেকে আম চলে যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে।

 আড়ৎ কিংবা চাষিদের কাছ থেকে আম কিনে কিছু কিছু ব্যবসায়ী খুচরাও বিক্রি করেন বানেশ্বরে। হাটে তিন-চার ক্যারেট আম খুচরা বিক্রি করেন পুঠিয়ার চকধাধাস গ্রামের বাসিন্দা ওসমান আলী। তিনি জানালেন, হাটে এখন চাষিরা ভালোমানের ল্যাংড়া এক হাজার থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা, ফজলি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, লক্ষণভোগ বা লখনা ৪০০ থেকে ৭৫০ টাকা, আশি^না ৪০০ টাকা, আম্রপালি এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা, তোতাপুরি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং হিমসাগর বা খিরসাপাত এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারছেন। ওসমানের পর্যবেক্ষণ, গতবছর এই সময়ে এসব আম যে দামে বিক্রি হয়েছিল এবার অর্ধেকেরও কম দাম।

উৎপাদন বেশি হলে কম দামেও পুষিয়ে যাওয়ার কথা। তাও কেন ক্ষতি হবে, সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিলেন বানেশ্বরের মেসার্স ঘোষ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি আড়তের মালিক সঞ্জিত সাহা। তিনি বলেন, আমের যতেœ চাষিরা অনেক খরচ করেন। তাই আগে ১০০টা আম উৎপাদন হলে এখন ৩০০টা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে এত আম কেনার লোক নেই। তাই ক্ষতি।

রাজশাহীতে এ বছর ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। গত বছর ছিল ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে। এ বছর আমবাগান বেড়েছে ৩৭৩ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি লক্ষ্যমাত্রা ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় মোট দুই লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের কথা। সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে না গেলেও পূরণ হবে বলছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রাজশাহীর উপ-পরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল বলেন, গত বছর আমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কিন্তু এ বছর হবে। আমাদের ফাইনাল রিপোর্ট এখনো হয়নি। বিঘাপ্রতি ৫০ মণ, সাতবিঘায় ১২ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এটা তো কম না। প্রচুর আম উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু দাম নেই। পরিবেশ-পরিস্থিতি এত খারাপ, দাম কী করে ভালো হবে!

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর