বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ঢাকা ছাড়ার হিড়িক

ফেরিঘাটগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা ছাড়ার হিড়িক

লকডাউনের খবরে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ফেরিঘাটে গতকাল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনা সংক্রমণ রুখতে সীমিত বিধিনিষেধ শেষে আজ ভোর থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। মানুষকে ঘরে রাখতে বন্ধ অফিস পাড়া। বন্ধ সব ধরনের যান্ত্রিক গণপরিবহন। এই পরিস্থিতিতে গতকাল বিধিনিষেধের আগের দিনই ঢাকা ছেড়েছে লাখো মানুষ। ঢাকার প্রতিটা প্রবেশ পথ ও ফেরিঘাটগুলোয় ছিল উপচে পড়া ভিড়। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি রওনা হন নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ। আবার বিধিনিষেধের সময়সীমা বাড়াতে বাড়াতে কোরবানির ঈদ পার করে দেওয়া হতে পারে- এমন আশঙ্কায় শেষ সুযোগ হিসেবে গতকাল ঢাকা ছেড়েছেন অনেকে। এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটে বহু পথ পাড়ি দিতে হয়েছে ঘরমুখো এসব মানুষকে। ভোগান্তি সঙ্গে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভেঙে ভেঙে গ্রামের বাড়ির পথে রওনা হন তারা। ভাড়া গুনতে হয়েছে কয়েকগুণ বেশি। যাত্রাপথে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির বালাই। গাদাগাদি করে কখনো পিকআপে, কখনো ইজিবাইক, ট্রাক, অটোরিকশা বা মাইক্রোতে চড়ে ফিরেছেন বাড়ি। পুলিশ চেকপোস্ট থাকায় ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথগুলো পার হয়েছেন পায়ে হেঁটে বা রিকশায় চড়ে। গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় ছিল ঘরমুখো মানুষের ঢল। উপচে পড়া ভিড় ছিল শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেও।  গতকাল দুপুরে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাওয়ার পথে দেখা যায়, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ৬-৭ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে  ফেরিঘাটের দিকে যাচ্ছেন অনেক মানুষ। ফেরিঘাট সূত্র জানায়, লকডাউনের খবরে গত চার-পাঁচ দিন ধরেই ফেরিঘাটে যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। গতকাল সকাল থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করে। সকাল থেকে যেসব ফেরি ছেড়ে যায় তাতে ৮০ শতাংশের বেশি জায়গা যাত্রীদের দখলে ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বাড়ে। সকালে ১৪টি ফেরি চললেও চাপ বাড়ায় পরে ১৬টি করা হয়। শিমুলিয়া থেকে যাত্রী বোঝাই করে ফেরিগুলো ছেড়ে গেলেও বাংলাবাজার থেকে ফিরছে খালি। ফেরিতে গায়ে গা লাগিয়ে নদী পার হতে দেখা গেছে মানুষকে। আমাদের মাদারীপুর প্রতিনিধি বেলাল রিজভী জানান, গতকাল শিমুলিয়া থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে আসা প্রতিটি ফেরিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলমুখী যাত্রীদের ভিড় ছিল। তবে গত কয়েকদিনের উপচে পড়া ভিড়ের তুলনায় গতকাল দুপুরের পর থেকে যাত্রীদের চাপ কিছুটা কম ছিল। সপ্তাহের বেশি সময় ধরে লঞ্চ, ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় পুরো সময়টাতে ফেরিতে যাত্রীদের ভিড় বেশি ছিল। আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি রোমান চৌধুরী সুমন জানান, গতকাল হাজার হাজার মানুষ বাড়ি ফিরছেন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাইনবোর্ড, শিমরাইল চিটাগাং রোড দিয়ে। এ যাত্রায় যে পার হতে পারবে সেই গ্রামের বাড়িতে করতে পারবে ঈদ, এমনটি ধারণা ঘরমুখো এসব মানুষের। গণপরিবহন না থাকায় ২০০ টাকার ভাড়া ১ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়েছে। সরেজমিন গতকাল দুপুরে সাইবোর্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিচ্ছিন্নভাবে বাস না পেয়ে পিকআপ ভ্যানে করে মানুষ গাদাগাদি করে গন্তব্যে রওনা দিয়েছে। প্রাইভেটকার ভাড়া করে মোবাইল কোর্ট বা পুলিশি ঝামেলা এড়াতে সেখানে প্রায় অনেকের হাতেই ছিল প্রেসক্রিপশন ও চিকিৎসার কাগজপত্র।  অনেক পরিবারকে অ্যাম্বুলেন্সে করে শিশুসহ বাড়িতে যেতে দেখা গেছে।

 যেখানে যখন যা পেয়েছে তাতে চড়েই ভেঙে ভেঙে বাড়ি ফিরেছে মানুষ। নরসিংদীর যাত্রী হাছান মিয়া জানান, ঢাকা থেকে একটি পিকআপ ভ্যানে উঠছি। নরসিংদী যেতে আমাকে গুনতে হচ্ছে ৮০০ টাকা। কিছু করার নেই। চট্টগ্রামের যাত্রী মাছ ব্যবসায়ী কবির মিয়া বলেন, কী করব জানি না। দুই-তিন দিন লাগলেও আমাকে যেতেই হবে। ট্রাকে ওঠার চেষ্টায় আছি। এক-দুই হাজার যা চায়, দিয়ে দেব। যেভাবেই হোক যেতেই হবে। পরে আর সুযোগ পাব না।

আমাদের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল থেকেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে বাড়ি ফেরা  যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। ঢাকা আরিচা মহাসড়ক ও হেমায়েতপুর সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্যবাহী ট্রাক, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, ভ্যান, রিকশাসহ ছোট যানবাহনে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে জড়ো হয় মানুষ। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকায় যাত্রীরা সহজেই পদ্মা পাড়ি দেন। বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত মহা-পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, পরিবহন না চলায় ঘাটে চাপ নেই। অনেক সময় যানবাহনের জন্য ফেরি বসে থাকে। এই নৌরুটে ১৪টি ফেরি চলাচল করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর