শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

শুনবে জন্মবধিররা মুখে ফুটবে কথা

ওসমানী হাসপাতালে হবে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

শুনতে পায় না বলে, ভাষা শিখতে পারে না জন্মবধিররা। তাই হাতের ইশারাই তাদের মুখের ভাষা। তবে এবার সিলেটের মূক ও বধিরদের জন্য সুসংবাদ নিয়ে এসেছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের মাধ্যমে শুনতে পাবে জন্মবধিররা। অস্ত্রোপচার করে মেশিন বসানো আর বিভিন্ন থেরাপির মাধ্যমে তারা শোনার পাশাপাশি বলতে পারবে কথাও। আগামী মাস থেকে ওসমানী হাসপাতালে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেটের কৃতী সন্তান জয়নুল বারী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাবস্থায় তার বন্ধু এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. ময়নুল হক জন্মবধিরদের শ্রবণ চিকিৎসার জন্য ওসমানী হাসপাতালে ‘কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রজেক্ট’ চালুর অনুরোধ জানান। তার অনুরোধে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রজেক্টটির জন্য ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রজেক্টটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার। তিনি জানান, ইতিমধ্যে কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের ল্যাবরেটরির কাজ শেষ হয়েছে। লজিস্টিক সাপোর্টও পাওয়া গেছে। কেবলমাত্র অপারেশন থিয়েটারের কাজ চলমান আছে। সব কাজ সম্পন্ন করে আগামী আগস্ট মাস থেকে কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের কাজ শুরুর ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ঢাকার বাইরে দেশে এই প্রথম কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। ওসমানী হাসপাতালে এই কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন হাসপাতালটির নাক, কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মনিলাল আইচ লিটু ও সহকারী অধ্যাপক ডা. নূরুল হুদা নাঈম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হাসনাত জোয়ার্দ্দারের তত্ত্বাবধানে তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে কক্লিয়ার ইমপ্লান্টে দক্ষতা অর্জন করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ওসমানী হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রমের প্রকল্প পরিচালক ডা. নূরুল হুদা নাঈম জানান, যারা কানে কম শুনে বা শ্রবণ শক্তি কম, হেয়ারিং এইড দিয়ে তাদের শ্রবণশক্তি বাড়ানো যায়। কিন্তু যারা জন্মবধির, হেয়ারিং এইড তাদের কোনো কাজে আসে না। এরকম জন্মবধির বা মূক ও বধিরদের শ্রবণ ফিরে পাওয়ার জন্য কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট হচ্ছে কার্যকর উপায়। কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর প্রচুর সাড়া মিলেছে। কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের মাধ্যমে জন্মবধিরদের শ্রবণ শক্তি ফিরিয়ে দিয়ে ওসমানী হাসপাতাল মাইলফলক স্থাপন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ওসমানী হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনিলাল আইচ লিটু জানান, ঢাকার বাইরে দেশে প্রথম ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্মবধিরদের কানে কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের পর শ্রবণশক্তি ফিরে পেতে তাদের অডিও ভারভালসহ বিভিন্ন থেরাপি দেওয়া হবে। এই প্রজেক্টের আওতায় ইতিমধ্যে ৪৮টি কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ক্রয় করা হয়েছে। ল্যাবরেটরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন কেবল অপারেশন থিয়েটারের কাজ সম্পন্ন হলে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট শুরু করা যাবে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ‘কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম’ প্রজেক্টের কার্যক্রম ইতিমধ্যে ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রজেক্টের আওতাধীন ৩০ জন চিকিৎসক ও নার্স নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালাও সম্পন্ন হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর