রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে নীরব চাঁদাবাজি

দৈনিক ও মাসিক আদায় করা হয় চাঁদা আধিপত্য নিয়ে চলে সংঘাত

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে নীরব চাঁদাবাজি

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে নীরব চাঁদাবাজি। সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন এবং অপরাধী চক্রগুলো ক্যাম্পগুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে দৈনিক ও মাসিক হারে চাঁদা আদায় করে আসছে। তাদের চাহিদামতো চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। এমনকি চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অপরাধী চক্রগুলো নিজেদের মধ্যেই জড়িয়ে পড়ে সংঘাতে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাঁদাবাজি হয় এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ একইভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করেছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমানও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শরণার্থী ক্যাম্পের এক বাসিন্দা বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠন এবং সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ রোহিঙ্গারা। চাঁদা দেওয়া ছাড়া এখানে ব্যবসা করতে পারে না কেউ। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। তাই চাঁদা দিয়েই বসবাস করতে হয় ক্যাম্পের অধিবাসীদের।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে চারটি জঙ্গি সংগঠন। এ সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও),  ইসলামী মাহাজ এবং জমিয়তুল মুজাহিদিন। এ জঙ্গি সংগঠনগুলোর বাইরে সক্রিয় রয়েছে আরও কমপক্ষে ২০ সন্ত্রাসী গ্রুপ। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সবাই ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থেকে দৈনিক এবং মাসিক হারে চাঁদা আদায় করে। ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে ২৭টিতে একক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আরসার। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি চাঁদা আদায় করে আরসা। ৩২ ক্যাম্প বাজারে আরসার রয়েছে একজন করে জিম্মাদার। তারা জিম্মাদারের মাধ্যমে ক্যাম্প বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ব্যবসার ধরন অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা মাসিক চাঁদা আদায় করে। ক্যাম্পে বসবাসরত প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের কাছ থেকে মাসে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে তারা। এ ছাড়া ক্যাম্পে অবস্থানরত প্রতিটি কর্মজীবীর এক দিনের আয় জমা করতে হয় আরসার তহবিলে। আরসা ছাড়াও জঙ্গি সংগঠন আরএসও, ইসলামী মাহাজ, জমিয়তুল মুজাহিদিন দৈনিক ও মাসিক হারে চাঁদা আদায় করে থাকে। জঙ্গি সংগঠনগুলোর পাশাপাশি ছোট-বড় ২০টি সন্ত্রাসী সংগঠনও সাধারণ রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে।

সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো সাধারণ রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি ক্যাম্পে সক্রিয় অপরাধী চক্রগুলোর কাছ থেকেও মাসোহারা আদায় করে। চাঁদাবাজির ভাগ-বাটোয়ারা এবং ক্যাম্পে আধিপত্য নিয়ে প্রায়ই বিবাদে জড়িয়ে পড়ে সন্ত্রাসীরা। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটে হতাহতের ঘটনা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর