রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

সিলেটে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বাড়ছে খুনোখুনি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে তুচ্ছ ঘটনায় বেড়েই চলছে খুনোখুনি। কেউ প্রাণ দিচ্ছেন দুর্বৃত্তদের হাতে, আবার কেউ খুন হচ্ছেন পরিবার ও স্বজনদের হাতে। হঠাৎ এই খুনোখুনি বেড়ে যাওয়ার জন্য পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়, আস্থা-বিশ্বাসের ঘাটতি ও নৈতিক মূল্যবোধের অভাবকে দায়ী করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শুক্রবার রাতে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের পরগনা বাজার এলাকায় তিন ছেলে মিলে কুপিয়ে খুন করেন তোতা মিয়া নামের এক বৃদ্ধকে। দ্বিতীয় বিয়ে করা ও সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ছেলেদের হতে প্রাণ হারান তিনি। তোতা মিয়ার ভাগ্নে নেওয়াজ উদ্দিন জানান, ছেলেদের নিয়ে প্রথম স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যাওয়ায় ১৮ দিন আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তোতা মিয়া। সম্পত্তি নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে আগেই বিরোধ ছিল। আর দ্বিতীয় বিয়ে করায় ক্ষোভ থেকে তিন ছেলে মিলে তাকে খুন করেন। 

ছেলেদের হাতে বাবা খুনের চেয়ে আরও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গত ১৬ জুন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি গ্রামে। নিজবাড়িতে স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে কুপিয়ে খুন করেন হিফজুর রহমান। স্ত্রী-সন্তানদের খুনের পর নিজের শরীরে দা দিয়ে আঘাত করে আহত হওয়ার অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু পুলিশি তদন্তে হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হলে খুনি হিসেবে উঠে আসে হিফজুরের নাম। ইতিমধ্যে ট্রিপল মার্ডারের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন হিফজুর। এ ঘটনার তিন দিন পর ১৯ জুন রাতে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার সোয়াইরগাঁওয়ে নিজবাড়ি থেকে স্কুলশিক্ষিকা তপতী রানী দের গলাকাটা ও গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ বৈদ্যের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রায় সাত বছর ধরে গৌরাঙ্গ ওই বাড়িতে থেকে গৃহস্থালির কাজ করে আসছিল। এই জোড়া লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্কুলশিক্ষিকার ছেলে বাদী হয়ে গৃহকর্মী গৌরাঙ্গকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন- তার মা তপতী রানীকে জবাই করে খুন করে গৌরাঙ্গ আত্মহত্যা করেছে। অন্যদিকে গৌরাঙ্গের ভাই গৌতম থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। তবে অপমৃত্যু মামলার পরদিন গৌতম অভিযোগ করেন এ মামলার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। লাশের ময়নাতদন্তের কথা বলে পুলিশ একটি কাগজে তার স্বাক্ষর নিয়েছে। পরে তাকে বলা হচ্ছে তিনি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। তার দাবি গৌরাঙ্গকে খুন করা হয়েছে। তপতী খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে তার ভাইকে খুন করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এই জোড়া খুনের ঘটনায় গৌরাঙ্গ আঙুল তুলেন তপতীর পরিবারের সদস্যদের দিকে।

এ ছাড়া গত ১৯ জুন রাতে ওসমানী হাসপাতালে মারা যান ছাতকের ছাতারপই গ্রামের আবদুল আলীর ছেলে তাজউদ্দিন আহমদ। তার পরিবারের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে। ১২ জুন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মেহেরপুরে পারিবারিক কলহের জের ধরে গৃহবধূ নিপা আক্তারকে গলা কেটে হত্যা করেন তার স্বামী। ৯ জুন জগন্নাথপুরের সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের গোয়ালগাঁও গ্রামে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে মাদরাসাছাত্রী সানজিদা আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করেন তার আপন চাচা।

এ ছাড়াও সিলেট বিভাগে প্রতিদিনই ঘটছে এমন সহিংসতার ঘটনা। তুচ্ছ ঘটনায় একজন আরেকজনের প্রাণ কেড়ে নিতে দ্বিধাবোধ করছে না। এ রকম সহিংসতার জন্য সামাজিক অস্থিরতা ও নৈতিক অবক্ষয়কে দায়ী করে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড মিডিয়া এনালাইসিস) জেদান আল মুসা বলেন, নৈতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করা না গেলে পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতা রোধ সম্ভব নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর