মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
হাই কোর্টের পরামর্শ

অক্সিজেট ডিভাইসের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন দেওয়ার জন্য বুয়েটের তৈরি ‘অক্সিজেট’ নামের ডিভাইসের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পরামর্শ দিয়েছে হাই কোর্ট।  বিষয়টি নিয়ে হাই কোর্টের নির্দেশনা চেয়ে এক আইনজীবী আবেদন করলে গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ এ পরামর্শ দেয়। এই ডিভাইসটি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করেন আবেদনকারী আইনজীবী। বিচারপতি বলেন, ‘অক্সিজেটের ওপর মিডিয়ায় ইতিবাচক প্রতিবেদন পড়েছি। কভিড তো আমাদের সবার চোখ খুলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক ইনোভেটিভ মাইন্ডের। করোনাকালে যদি নতুন এই ডিভাইসে জনগণের প্রাণ রক্ষা হয়, নিশ্চয়ই তিনি বিচার বিবেচনা করে দেশের স্বার্থে তা ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারেন।’ এ জন্য ডিভাইসটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনের লক্ষ্যে তাঁর মুখ্য সচিবকে চিঠি লিখতে পরামর্শ দেয় আদালত।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসানের নেতৃত্বে ‘অক্সিজেট’ নামে একটি ডিভাইস তৈরি করেন।

 এটি দিয়ে হাসপাতালের সাধারণ বেডেই ৬০ লিটার পর্যন্ত হাই-ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব বলে তারা জানান। করোনার এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক। আদালতকে তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে অক্সিজেটের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন করোনা রোগীকে এই যন্ত্র দিয়ে হাই-ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর বা ডিজিডিএ এটা ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে না। তারা বলেছে, কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য না হলে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।

এ সময় বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা গত বছর বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে অনেক টাকা। আমরা তো আবার জিনিসপত্র কেনাকাটায় বেশি আগ্রহী। অথচ দেশীয় উদ্ভাবিত জিনিসে অতটা আগ্রহী হই না।’

তখন আইনজীবী অনিক আর হক বলেন, ‘হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সংকটে করোনায় আক্রান্তদের প্রাণহানি বাড়ছে। তাই এই সংকটে বুয়েটের অক্সিজেট যন্ত্রটি উৎপাদনের অনুমতি পেলে সারা দেশে রোগীদের অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ হতো। আর এক্ষেত্রে সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা বিদেশ থেকে কিনতে হতো না। এটি এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’ আইনজীবী আরও বলেন, ‘যন্ত্রটি এরই মধ্যে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) অনুমোদন নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের দুটি ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। ডিভাইসটি দিয়ে হাসপাতালের সাধারণ বেডেই ৬০ লিটার পর্যন্ত হাই-ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব। আর একটি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার জন্য খরচ যেখানে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা, সেখানে বুয়েটের আবিষ্কৃত যন্ত্রটির উৎপাদন খরচ পড়বে মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকা।’

বিচারক বলেন, ‘এই ধরনের ডিভাইস নিয়ে পাবলিক ক্যাম্পেইন দরকার। আপনি (আইনজীবী) এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দেন। আমাদের আদেশ ছাড়াই যদি বিষয়টির সুরাহা হয় তাহলে তো ভালো। কারণ সরকারি জিনিসপত্র কেনাকাটা নিয়ে নানা নিয়মনীতি রয়েছে। রয়েছে নানা ঝামেলা। আমরা এখান থেকে বিষয়টির ভালো বা খারাপ দিক কী কী বুঝতে পারব না।’ পরে আদালত এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর