মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

বর্জ্যরে কারণে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদায় দূষণ

ভেস্তে যাচ্ছে সব আয়োজন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী এবং ডলফিন রক্ষায় স্থাপন করা হয় ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। এ ছাড়া দ্রুত অভিযান পরিচালনায় ব্যবস্থা করা হয় স্পিডবোট। হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। এসব উদ্যোগ নদীটির জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষায় আশার আলো দেখিয়েছে। কিন্তু নদীসংলগ্ন বামনশাহী খালের মাধ্যমে নগরের বর্জ্য সরাসরি হালদা নদীতে গিয়ে পড়ায় দূষিত হচ্ছে পানি। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। হুমকিতে পড়ছে নদীর জীববৈচিত্র্য। বর্জ্যরে থাবায় দূষিত হচ্ছে হালদা নদী। জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে হালদা নদী দূষণকেন্দ্রিক নানা সমস্যা নিরসন হয়েছে। গত আড়াই বছরে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিচালনা করে প্রায় ২০০টি অভিযান। এ ছাড়া বন্ধ করা হয় ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও এশিয়ান পেপার মিলস। পাশাপাশি হালদা নদীর উৎপত্তিস্থল মানিকছড়িতে স্থানীয় প্রশাসন ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফের উদ্যোগে প্রায় বন্ধ করা হয়েছে তামাক চাষ। দুই শতাধিক চাষি এখন তামাক বাদ দিয়ে সবজি চাষ করছেন। মা মাছ নিধন বন্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনার সুবিধার্থে আইডিএফের উদ্যোগে কেনা হয় স্পিডবোট। স্থাপন করা হয় চারটি সিসি ক্যামেরা ও রয়েছে সার্বক্ষণিক পাহারায় ৪০ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবী দল। কিন্তু এসব উদ্যোগকে ম্লান করে দিচ্ছে বামনশাহী খাল হয়ে নগরের বর্জ্য হালদায় পড়ায়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) অনন্যা আবাসিকের বর্জ্য কুয়াইশ খাল-খন্দকিয়া হয়ে সরাসরি পড়ছে হালদায়। ফলে দূষিত হচ্ছে হালদা নদীর পানি।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, অনন্যা আবাসিক এলাকার গৃহস্থালি ও বাণিজ্য বর্জ্য বামনশাহী হয়ে সরাসরি হালদায় পড়ায় দূষণ হচ্ছে।        

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড.  মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, অনন্যা আবাসিক হওয়ার পর ভরাট হয়ে যায় বামনশাহী খালের প্রায় আড়াই কিলোমিটার অংশ। পরে ভরাট খালের  সঙ্গে হালদার সংযোগ করে দেয়। এতে অনন্যা আবাসিকের বর্জ্য কুয়াইশ খাল-খন্দকিয়া হয়ে সরাসরি পড়ছে হালদায়। কিন্তু সড়কের ওপর থাকা একটি কালভার্ট খুলে দিলে অনন্যা আবাসিকের বর্জ্য-পানি কর্ণফুলীতে গিয়ে পড়বে।   

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রুহুল আমীন বলেন, ‘গত আড়াই বছরে দিনরাত সমানে হালদা নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। হালদা প্রশ্নে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।’       

হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হাসান রনি বলেন, ‘নানা কারণে হালদা নদীর এখন সুবর্ণ সময়। রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, গাঙ্গেয় ডলফিনসহ নানা প্রাণী ও উদ্ভিদের অনন্য জীববৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্রের কারণে নদীটিকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় টেকসই পরিকল্পনা ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। হালদার ব্রুড মাছ, রেণু, পোনা উৎপাদন ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে মাঠপর্যায়ে বাস্তবভিত্তিক ব্যাপক গবেষণা করে টেকসই ব্যবস্থা নিতে হবে।’      

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাব সূত্রে জানা যায়, নগর ও হালদার আশপাশের এলাকার বর্জ্য নানাভাবে গিয়ে পড়ে নদীতে। নিধন করা হয় মা মাছ। অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয় বালি, চালানো হয় ইঞ্জিনচালিত বোট। হালদা নদীর মূল দৈর্ঘ্য ছিল ১২৫ কিলোমিটার। গত এক শতকে নদীতে কাটা হয় ১১টি বাঁক। এতে দৈর্ঘ্য কমে প্রায় ২৫ কিলোমিটার। ফলে ধাক্কা লাগে নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননে। হালদা নদী হারায় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। কমেছে হালদার বাণিজ্যিক গুরুত্ব। অতীতে চাক্তাই খাল দিয়ে বড় বড় নৌকায়  হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-নাজিরহাটে নৌপথে পণ্য পরিবহন করা হলেও এখন আর সেই দৃশ্য নেই। বর্তমানে কেবল চাক্তাই থেকে মেখল বা ছিপাতলী পর্যন্ত নৌকা চলাচল করতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর