শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

সিলেটে করোনা নিয়ন্ত্রণে পাঁচ সুপারিশ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে করোনা নিয়ন্ত্রণে পাঁচ সুপারিশ

সিলেটে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই আক্রান্ত ও শনাক্তে নতুন রেকর্ড হচ্ছে। কঠোর লকডাউন দিয়েও ঘরে রাখা যাচ্ছে না জনসাধারণকে। পরিস্থিতি এতই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এখন সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালেও মিলছে না সিট। আর আইসিইউ যেন হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন গতকাল ‘করোনা সংক্রমণ ও প্রতিরোধসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটির’ জরুরি বৈঠক ডাকেন। সেই সভায় বিশেষজ্ঞরা করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৫টি সুপারিশ করেছেন।

এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে স্থানীয় জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।  সভায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে রোগীর সংখ্যা কমানো তথা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়ে আরও বেশি করে গণসচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্ব এবং লকডাউন অর্থবহ করতে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশসানকে আরও কঠোর ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। শুধু প্রধান সড়ক বা শহরের মধ্যে অভিযান সীমাবদ্ধ না রেখে শহরের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অভিযান পরিচালনার পরামর্শ দেওয়া হয়। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে উপজেলাগুলোর ইউনিয়ন ও শহরের ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে তাদের মাঠে নামানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। গণসচেতনতা তৈরিতে মসজিদে মসজিদে করোনার ভয়াবহতা, সতর্কতা ও সুরক্ষা নিয়ে ইমামদের ভূমিকা রাখতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ঈদুল আজহায় যাতে যেখানে-সেখানে কোরবানির পশুর হাট না বসে এবং বৈধ পশুর হাটে যাতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত না হয় সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখার তাগিদ দেওয়া হয় প্রশাসনকে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে আক্রান্ত শনাক্তের পাশাপাশি তাদের কঠোর আইসোলেশনে রাখা গেলে সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে অভিমত দেন বিশেষজ্ঞরা। আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে জেলা শহরের হাসপাতালে রোগীর চাপ কমবে বলে জানান তারা। অনলাইন এই সভায় বিশেষজ্ঞরা পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে  দেখান, গ্রামে এখন আশঙ্কাজনকভাবে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই উপজেলা থেকে যেসব চিকিৎসককে ডেপুটেশনে জেলা সদরের হাসপাতালে আনা হয়েছিল তাদের নিজ নিজ উপজেলায় ফিরে যেতে হবে। মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের জেলা সদরের হাসপাতালে আরও বেশি করে সময় দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সিলেটের কভিড ডেডিকেটেড শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল ও বিভাগের সর্ববৃহৎ সরকারি হাসপাতাল ওসমানীতে  রোগী বাড়লেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের নিশ্চয়তা দেন অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রার প্রতিনিধি।

এ ছাড়া ওসমানীতে কভিড চিকিৎসার জন্য শয্যা বৃদ্ধি এবং খাদিমপাড়া ও দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধির তাগিদ দেওয়া হয়। সভায় পরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, সিলেটের করোনা পরিস্থিতির উন্নয়নে কঠোর লকডাউন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষকে বাধ্য করতে হবে। সংক্রমণের হার কমাতে না পারলে আইসিইউ বেড বা হাসপাতাল বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অচিরেই এ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব।

ইতিমধ্যে দেশে প্রায় ৪৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এসেছে, আরও পাইপ লাইনে রয়েছে। সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ছাড়াও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ, স্বাস্থ্যবিভাগের সচিব মো. লোকমান মিয়া, বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক, ওসমানী হাসপাতালের উপপরিচালক, সিভিল সার্জনসহ স্বাস্থ্যবিভাগ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর