সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্যবসা-বাণিজ্য ট্রেড লাইসেন্সমুক্ত করার প্রস্তাব

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ডুয়িং বিজনেস রিফর্মস কমিটির সভায় আলোচনা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য যাতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউপির মতো স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার বিড়ম্বনা আর না পোহাতে হয়, সে ধরনের একটি প্রস্তাব দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 

প্রস্তাবটি হচ্ছে এ রকম : কোনো উদ্যোক্তা ব্যবসা শুরু বা কারখানা স্থাপনের জন্য কোম্পানি গঠনের আগে যদি রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (রেজেসকো) থেকে নিবন্ধন নিয়ে থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা নাই। সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর ইমপ্লিমেন্টেশন অব ডুয়িং বিজনেস রিফর্মস কমিটি’র সভায় সম্প্রতি এই প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগ এখনো এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি। এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে। কিন্তু বড় বড় প্রতিষ্ঠান যারা বিনিয়োগে আসে তারা আগে নানা প্রক্রিয়া শেষ করেই ব্যবসায় নামে। তাই আমরা বলেছি, ব্যবসা-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটির বেশি লাইসেন্সের দরকার নাই। অর্থাৎ যারা রেজেসকো থেকে নিবন্ধন নেবে তাদের যেন ট্রেড লাইসেন্সের প্রক্রিয়া থেকে রেহাই দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, বাণিজ্য সহজীকরণ বা ‘ইজি অব ডুয়িং বিজনেস’-এ বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরি করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর ইমপ্লিমেন্টেশন অব ডুয়িং বিজনেস রিফর্মস কমিটি’র সর্বশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৪ জুলাই। ওই সভায় এই ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ট্রেড লাইসেন্স তুলে দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের আপত্তি রয়েছে। কারণ স্বায়ত্তশাসিত এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বড় একটি অংশ আসে বিভিন্ন ধরনের মাশুল থেকে। ট্রেড লাইসেন্স সেই মাশুল আদায়ের একটি বড় খাত। তপন কান্তি ঘোষ জানান, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মাশুল আদায়ের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, রেজেসকো থেকে যখন উদ্যোক্তারা নিবন্ধন নেবেন, তখনই ট্রেড লাইসেন্সের মাশুল কেটে রেখে সেটি স্থানীয় সরকার বিভাগকে দেওয়া হবে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যকে ট্রেড লাইসেন্সমুক্ত করলেও এতে স্থানীয় সরকারের আর্থিক কোনো ক্ষতি হবে না।  সংশ্লিষ্টরা জানান, সিটি করপোরেশন কর বিধান ১৯৮৩-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্সের সূচনা ঘটে। এই লাইসেন্স উদ্যোক্তাদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়ে থাকে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করতে হয়। আবেদন ফরমের সঙ্গে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাকে নানা ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়। প্রতি বছর এই ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। আবেদনের পর সময় মতো ট্রেড লাইসেন্স নিতে দালালচক্র ধরতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এটিকে একটি বাধা বলে মনে করেন দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থানীয় সরকারের ট্রেড লাইসেন্স প্রক্রিয়া থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যকে মুক্ত রাখলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হবে। এর ফলে ইজি অব ডুয়িং বিজনেস সূচকেও বড় ধরনের অগ্রগতি হবে। কারণ বর্তমানে ব্যবসা শুরুর ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে একজন উদ্যোক্তাকে নানা ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়।

এসব ডকুমেন্ট দেওয়ার পরও সময় মতো লাইসেন্স মেলে না। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, ইজি অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের রেটিং ১০০-এর নিচে নামিয়ে আনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। এটি অর্জন করতে গেলে এক ছাতার নিচে সব সুবিধা নিয়ে আসতে হবে। একজন উদ্যোক্তা রেজেসকো থেকে ব্যবসার নিবন্ধন নেওয়ার পর তাকে আবার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে বলার মানেই হচ্ছে বিনিয়োগ প্রক্রিয়াকে দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে ফেলে দেওয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর