বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

নিরাপদ ডটকমের সিইও শাহরিয়ার খান গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ল্যাপটপ, ফ্রিজসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক সামগ্রীতে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট; ৩০ দিনের মধ্যে হোম ডেলিভারি- এমন প্রলোভন দেখিয়ে মাল্টিপারপাস পদ্ধতিতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় কথিত ই-কমার্স সাইট ‘নিরাপদ ডট কম’। এসব অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহরিয়ার খানকে গতকাল রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ তাকে গ্রেফতারের সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত পাঁচটি কম্পিউটার, দুটি ল্যাপটপ, দুটি হার্ড ডিস্ক, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি চেক বই, ১৩টি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, ২৩টি সিম কার্ডসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জব্ধ করেছে। গতকাল ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘নিরাপদ ডট কমের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে ইশতিয়াক আহমেদ নামে এক ব্যক্তি আদাবর থানায় মামলা করেন।

তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে শাহরিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। শাহরিয়ার ২০২০ সালের আগস্ট মাসে নিরাপদ ডট কম নামে কথিত ই-কমার্স সাইট খোলেন। তিনি বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন। তাদের কাছ থেকে একটি পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অগ্রিম অর্থ নেন। তারা ৫০ শতাংশ কমে মোবাইল ফোন সেট, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফ্রিজ, ওভেনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক আইটেম ৩০ দিনের মধ্যে হোম ডেলিভারি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের প্রলোভিত করতেন। এই সাইটের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। তারা এক মাসে প্রায় ১২ হাজার অর্ডার পায়। যার মাধ্যমে প্রায় ৭-৮ কোটি টাকা শাহরিয়ারের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। যারা পণ্য অর্ডার করেছেন তাদের বেশির ভাগই ছাত্র ও অল্প বেতনের চাকরিজীবী। প্রাথমিক অবস্থায় তারা কিছু পণ্য ডেলিভারি করে সেই গ্রাহকদের দিয়ে তাদের পেইজে পজিটিভ রিভিউ পোস্ট দেওয়ায়। এতে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন হয়। পরবর্তীতে অধিক সংখ্যায় অর্ডার এবং অগ্রিম অর্থ নিয়ে তারা পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে।

এক মাসের স্থলে তিন থেকে চার মাস পেরিয়ে গেলেও পণ্য বুঝে না পেয়ে তারা প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন। তখন তারা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও মিডিয়ার মাধ্যমে এর প্রতিকার দাবি করতে থাকেন। যারা চাপ দিতে পেরেছেন তাদের টাকা ফেরতের কথা বলে ব্যাংক চেক দেওয়া হয়। কিন্তু চেক প্রাপ্তরা টাকা তুলতে পারেননি। বারবার চেক ডিজঅনার হওয়ার অভিযোগ আসতে থাকলে প্রতারিত গ্রাহকদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান শাহরিয়ার। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষে ইশতিয়াক আহমেদ আদাবর থানায় মামলা করেন।

ডিবি কর্মকর্তা শরীফুল আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ২ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট ভিত্তিক ও প্রায় এক লাখের মতো ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স সাইট চলমান রয়েছে। চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলোভিত না হয়ে মার্কেট প্লেস যাচাই করে পণ্য অর্ডার এবং অগ্রিম মূল্য পরিশোধের পরিবর্তে ক্যাশ অন ডেলিভারি অর্থাৎ পণ্য বুঝে পেয়ে মূল্য পরিশোধ করলে প্রতারণা এমনকি ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব বলে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর