বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

শেরেবাংলা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক অস্ত্রসহ গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসফিকুর রহমান ওরফে উজ্জ্বলকে (২৬)  গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪। সোমবার রাতে রাজধানীর  শেরেবাংলা নগর এলাকা থেকে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব বলছে, মাসফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এই মামলার তদন্তভার নিতে র‌্যাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবে আজ। এ তথ্য নিশ্চিত করেন র‌্যাব-৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, মাসফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা রুজুর পর তাকে শেরেবাংলা নগর থানায় হস্তান্তর করা হবে। উজ্জ্বল গ্রেফতারের খবরে এলাকার মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এবং একই সঙ্গে আতঙ্কে ভুগছেন। গত রাতে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

তাদের আশঙ্কা, যে কোনো সময় তিনি বের হয়ে তাদের ঘুম হারাম করে দেবেন।তবে উজ্জ্বল জেলে থাকলে অন্তত কয়েকটা দিন তারা শান্তিতে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।

র‌্যাব-৪-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাসফিকুর রহমান উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ ছয়টি মামলা রয়েছে। তিনি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে শেরেবাংলা নগরের তালতলা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছিলেন। পাশাপাশি তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। এলাকায় নতুন কোনো ভবনের কাজ শুরু হলে তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিতে হতো। চাঁদা না দিলে নিজের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে কাজ বন্ধ করে দিতেন তিনি। কেবল তা-ই নয়, আসামি উজ্জ্বল সরকারি খাসজমি ও অন্যের জমি দখল করে সেখানে স্থাপনা তৈরি করে এবং তা ভাড়া দিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। তার সহযোগীরা আগারগাঁও এলাকায় ফুটপাথের দোকান থেকে চাঁদা আদায় করেন। অস্ত্রধারী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কেউ সাহস পেতেন না। কেউ অভিযোগ দিলে মারধর করতেন উজ্জ্বল।

যত অভিযোগ উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে : অভিযোগের অন্ত নেই উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ আগারগাঁও তালতলার বাসিন্দারা। সাধারণ মানুষের সম্পত্তি দখল, মন্দির ও গণপূর্তের জমি দখল, চাঁদাবাজি, চাঁদার জন্য হুমকি দেওয়া, মাদক ব্যবসা, জুয়ার কারবার- এমন কিছু নেই যা তিনি করেন না। এলাকার মানুষ তার বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন দফতরে নানা আবেদন-নিবেদন করেছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। উজ্জ্বলের আছে একটি মোটরসাইকেল বাহিনী। তারা দিনরাত এলাকা দাপিয়ে বেড়ায়। এলাকায় কোনো ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হলেই সেখানে হাজির হয় উজ্জ্বলের মোটরসাইকেল বাহিনী। এরপর কাজের ধরন দেখে তারা চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়। সরকারি দলের পরিচয় থাকায় উজ্জ্বলের সব অনৈতিক কর্মকান্ডই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা এড়িয়ে যেতেন।

সূত্র বলছে, উজ্জ্বল ও তার বড় ভাই মাসুদ চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। তাদের মা-ও একজন মাদকবিক্রেতা। মাদক ব্যবসার মামলায় উজ্জ্বলের মা সাত বছর জেল খেটেছেন। এ ছাড়া বুলেট রুবেল, মালা, ইউনুস, ইসমাইল, মাসুদ ও সজীব মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। উজ্জ্বলের দেহরক্ষীর এবং বিভিন্ন জায়গায় মাদক পৌঁছানোর কাজ করেন সাইফুল ইসলাম মোল্লা।

২০১৯ সালে ২ কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে পশ্চিম কাফরুলের মোল্লাপাড়া তিন তলা মসজিদের উল্টো পাশে আবদুল হালিম আকন্দ, জাহাঙ্গীর আলম গংয়ের ৭ দশমিক ৪২ কাঠার জমি দখলে নেন উজ্জ্বল। আগারগাঁও তালতলার সর্বজনীন পূজা মন্দিরের জায়গা দখল করে সেখানে গুদামঘর বানিয়েছেন তিনি। ঘরটি ডেকোরেটরের কাছে ভাড়া দেওয়া। গণপূর্তের আবাসিক এলাকায় বি-৪ ভবনের পেছনের অংশে খালি জায়গায় একটি আধাপাকা এবং একাধিক টিনের ঘর আছে। আধাপাকা ঘরটিতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শেরেবাংলা নগর থানা কমান্ডের সাইনবোর্ড ঝোলানো। উজ্জ্বলের লোকেরা ওই ঘরে প্রতি রাতে মাদক ও জুয়ার আসর বসায় বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান। তালতলা বাসস্ট্যান্ডে শেরেবাংলা নগর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি কার্যালয় আছে। সেখানে মাঝেমধ্যে বসেন উজ্জ্বল। আর তার লোকেরা রাস্তার দুই পাশে অর্ধশতাধিক দোকান থেকে চাঁদা তুলে নেয়। শুধু তা-ই নয়, গণপূর্ত অধিদফতরের খালি জায়গায় বস্তি বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন উজ্জ্বল। তালতলায় গণপূর্তের গুদাম-১-এর জায়গায় অর্ধশতাধিক বস্তিঘর থেকে ভাড়া আদায় করেন উজ্জ্বলের ঘনিষ্ঠ সহকারী জ্যাকির বাবা গিয়াস উদ্দিন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর