বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় অসহায় চট্টগ্রাম

সংকট আইসিইউর, শয্যার চেয়ে ভর্তি রোগী বেশি

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

শব্দের অক্ষরে নয় বাস্তব অর্থেই করোনায় অসহায় চট্টগ্রাম। প্রতিদিনই ঘোড়দৌড়ে বাড়ছে সংক্রমণ। করোনার প্রথম ঢেউয়ে চট্টগ্রামে দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ছিল ১৫০ থেকে ২০০ জন। এবার মঙ্গলবার এক দিনেই আক্রান্ত ১ হাজার তিনজন, মারা যান ১০ জন। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগীতে টইটম্বুর। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা। একটি আইসিইউ শয্যার জন্য চলে হাহাকার। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ছোটাছুটি। সংকটাপন্ন অনেক রোগীর স্বজন অপেক্ষায় থাকেন কখন আইসিইউর একজন রোগী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন। অনেকে আবার অপেক্ষার প্রহরের আগেই চলে যাচ্ছেন না-ফেরার দেশে। ফলে করোনাভাইরাসে অসহায় চট্টগ্রাম। রোগের ভারে ভারাক্রান্ত হাসপাতাল। অন্তহীন ভোগান্তি-দুর্ভোগে রোগী।

 জানা যায়, চট্টগ্রামে করোনার চিকিৎসা চলছে চমেক হাসপাতালে ২০৬ সাধারণ ও ১০ আইসিইউ, বিআইটিআইডিতে ৫০, জেনারেল হাসপাতালে সাধারণ ১৪০ ও আইসিইউ ১৮, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে সাধারণ ১৪২ ও আইসিইউ ২০ এবং বেসরকারি আল মানাহিল হাসপাতালে ৪৩, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ৫০, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৫০, ন্যাশনাল হাসপাতালে ৫৪, সিএমপি বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতালে ৭০, সিএসসিআর হাসপাতালে ২৭, পার্কভিউ হাসপাতালে ৫৬ ও ম্যাক্স হাসপতালে ৫৭ শয্যায়। তবে সব হাসপাতালের সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা পূর্ণ। উল্টো চমেক, জেনারেলসহ একাধিক হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগী বেশি।

গতকাল দুপুরে সরেজমিন জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় শয্যার চেয়ে রোগী বেশি। তিনটি ওয়ার্ডে মিলে চলছে চিকিৎসা। ১৪০ শয্যার সবই পূর্ণ। জরুরি বিভাগে দেখা যায় শয্যার অভাবে ভর্তি করা যায়নি অন্তত চারজনকে। তবে রোগীদেরও অভিযোগ অনেক। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আলম নামে এক রোগীর স্বজন বললেন, ‘এখন দুপুর সাড়ে ১২টা। সকাল থেকেই কোনো চিকিৎসক রোগী দেখতে আসেননি। এখন পর্যন্ত দুজন রোগী নিজ ইচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন, আমরাও চলে যাচ্ছি। নার্সকে মাস্ক লাগাতে বললে কথাই শোনে না, পরে ওয়ার্ডবয় দিয়ে লাগাতে হয়েছে। অন্যদিকে আইসিইউ ইউনিটের সামনে রোগীর স্বজনরা উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ নিয়ে বসে আছেন। সিট নম্বর ধরে নার্স-আয়ারা কখন ডাকবেন তার অপেক্ষায় থাকছেন।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, ‘করোনা খুব দ্রুত বাড়ছে। আক্রান্ত হওয়ার পরই রোগী দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছেন। মানুষ অনেকটা দেরি করেই হাসপাতালে আসছেন।’ ইউএসটিসির মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ জাবেদ বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে সর্বস্তরের মানুষকেই সচেতন হতে হবে।’ চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার তিনজন শনাক্ত হয়েছেন। এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যা। তবে করোনা চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালসমূহে প্রয়োজনীয় শয্যা থাকলেও আইসিইউ সংকট আছে।’

সিভিল সার্জন কার্যালয়সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ১০ জন এবং নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার তিনজন। গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত ৬৭ হাজার ৭৮৭ জন। এর মধ্যে মহানগরে ৫১ হাজার ৯৪৯ এবং উপজেলায় ১৫ হাজার ৮৩৮ জন। ইতিমধ্যে মারা গেছেন ৮০০ জন। এর মধ্যে মহানগরে ৫০৮ ও উপজেলায় ২৯২ জন। চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি ১১টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা চলছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর