শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

আনসার আল ইসলামের আধ্যাত্মিক গুরু ‘গুনবি’ গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহআলী বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে আনসার আল ইসলামের আধ্যাত্মিক গুরু মাহমুদ হাসান গুনবিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-৪ যৌথ অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী বই এবং লিফলেট উদ্ধার করে। অন্যদিকে অপহৃত নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-২। গতকাল বিকালে কাওরানবাজার মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তিনি জানিয়েছেন, প্রথমে হুজির (বি) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে কারাবন্দী জসিম উদ্দিন রহমানির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। পরে আনসার আল বাংলা টিম (আনসার আল ইসলাম) এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। রাহমানি গ্রেফতারের পর গুনবি উগ্রবাদিত্বের প্রচারক হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেন। র‌্যাব বলছে, সংগঠনের অভ্যন্তরে উগৃবাদী মতাদর্শদের প্রচারে তিনি ‘ছায়া সংগঠন’ পরিচালনা করতেন। যাদের ‘মানহাজী’ সদস্য বলা হয়। ওই সদস্যরা সংগঠনের ভিতরে জঙ্গি সদস্য তৈরি করতেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিতেন। তিনি ‘দাওয়াত ইসলাম’ এর ব্যানারে অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পরিবর্তনে উদ্বুদ্ধ করে জঙ্গিবাদে অন্তর্ভুক্তির বিশেষ উদ্যেগ গ্রহণ করেন। এ ক্ষেত্রে তারা বিশেষ করে ‘মনস্তাত্ত্বিক অনুশোচনা’ জাগ্রত করার কৌশল অবলম্বন করেন। এ ছাড়া তিনি মাহফিলের আড়ালে জঙ্গি সদস্য রিক্রুট করতেন। গত মে মাসের প্রথম দিকে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। তিনি কুমিল্লা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে গিয়ে দুগর্ম এলাকায় আত্মগোপন করেন। জুনের শেষের দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের বিষয় টের পেয়ে তিনি পুনরায় স্থান পরিবর্তন করে বান্দরবানে গিয়ে ২-৩ দিন অবস্থান করেন। পরবর্তীতে তিনি লক্ষ্মীপুরের চর গজারিয়া ও চর রমিজে ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করে বেশ কয়েক দিন অতিবাহিত করেন। আবারও তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা টের পেয়ে সে স্থানও ত্যাগ করেন। এরপর তিনি উত্তরবঙ্গে আত্মগোপনের ও প্রয়োজনে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা করেন।

গুনবি ২০০৮ সালে জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর হতে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ঢাকাসহ কুমিল্লা, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। পাশাপাশি ধর্মীয় মতাদর্শের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ২০১০ সাল থেকে ওয়াজ শুরু করেন। এরপর তিনি ২০১৪ সাল থেকে ধর্মীয় বক্তব্যে উগ্রবাদিত্ব প্রচারে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। এ ছাড়া তিনি ধর্মীয় পুস্তকের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন।

যেভাবে ব্রেন ওয়াশ : প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গুনবির দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ ও আত্মঘাতী জঙ্গি সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশে দর্শন বা মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন একটি আবশ্যিক বিষয়। গ্রেফতার গুনবি একজন দর্শন পরিবর্তনকারীর ভূমিকা পালন করে থাকেন। তিনি আনসার আল ইসলাম (এবিটি) এর পক্ষে অন্যতম একজন দর্শন পরিবর্তনকারী। বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে গোপন আস্তানায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণার্থীদের বাইরের জীবন, সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান ইত্যাদি হতে দূরে রাখা হয়। অতঃপর তাদের মস্তিষ্কে ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভয়-ভীতি তৈরি ও স্বাভাবিক জীবন সম্পর্কে বিতৃষ্ণা জাগ্রত করা হয়ে থাকে। ফলে প্রশিক্ষণার্থীদের ভিতর আবেগ, অনুভূতি, বুদ্ধিমত্তা, পারিবারিক বন্ধন, বিচারিক জ্ঞান ইত্যাদি লোপ পায়। এভাবে কোমলমতিদের নৃশংস জঙ্গি হিসেবে গড়ে তোলা হয়। গত ৫ মে ঢাকা থেকে গ্রেফতার আল সাকিবের (২০) মতাদর্শ পরিবর্তন ও পরবর্তীতে তাকে আত্মঘাতী পন্থায় উদ্বুদ্ধকরণে গ্রেফতার গুনবি @হাসানের বিশেষ ভূমিকা ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর